কসবায় কীটনাশক সেবনে গৃহবধুর মৃত্যু

ভজন শংকর আচার্য্য, কসবা (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি॥ কসবায় যৌতুকের জন্য স্বামী ও শ্বশুরবাড়ীর লোকজনের নির্যাতনে কীটনাশক সেবনে রেশমা আক্তার (২২) নামে এক গৃহবধুর মৃত্যু হয়েছে। গত শনিবার (৮ অক্টোবর) রাতে  উপজেলার খাড়েরা ইউনিয়নের সোনারগাঁও গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর পলাতক স্বামী সহ পরিবারের লোকজন। রেশমা মেহারী ইউনিয়নের চৌবেপুর গ্রামের আলমগীর মিয়ার একমাত্র মেয়ে। গতকাল সকালে গৃহবধুর মরদেহ উদ্ধার করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতালে মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ। এ ঘটনায় গতকাল সকালে ৪ জনকে আসামী করে কসবা থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন নিহতের বাবা ।

নিহতের পরিবার ও অভিযোগ সুত্রে  জানা যায়, গত দুই বছর আগে উপজেলার মেহারী ইউনিয়নের চৌবেপুর গ্রামের শুটকি ব্যবসায়ী আলমগীর মিয়ার একমাত্র মেয়ে রেশমা আক্তারের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় খাড়েরা ইউনিয়নের সোনারগাঁও গ্রামের রুহুল আমিন মিয়ার ছেলে খাইরুল ইসলামের সাথে। দুই পরিবারের পছন্দে এই বিয়ে হলেও বিয়ের পর থেকেই য়ৌতুকের জন্য রেশমাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে করতে থাকে স্বামী ও তার পরিবারের লোকজন। খাইরুল গাজীপুরে একটি প্লাষ্টিক ফ্যাক্টরীতে চাকুরী করতো। বিয়ের পর থেকেই খাইরুল রেশমার সাথে দুর্ব্যবহার ও মানসিক নির্যাতন করতো। এইসব বিষয় নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে মনোমালিন্য চলছিলো। এ নিয়ে দুই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিলে  সালিশ সভাও করেন। চেয়ারম্যানগন সংসার টিকিয়ে রাখতে দুই পক্ষকেই মিলিয়ে দিলেও মিল হয়নি তাদের মধ্যে। স্বামীর নিকট মিলেনি রেশমার স্ত্রীর মর্যাদা।  গত বৃহস্পতিবার খাইরুল বাড়িতে আসে। গত শনিবার রাতে নির্যাতনের ফলে কেরির বড়ি সেবনে অসুস্থ হয়ে পড়ে রেশমা। এ অবস্থায় স্বামী ও পরিবারের লোকজন রেশমাকে হাসপাতালে নিতে দেরী করায় তার অবস্থার অবনতি হয়। পরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে কুমিল্লা রেফার করেন। রাতে কুমিল্লা নেয়ার পথে মারা যায় রেশমা। পরে রেশমার লাশ স্বামীর বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। খবর পেয়ে বাবা-মা এসে  থানায় খবর দিলে গতকাল সকালে পুলিশ স্বামীর বাড়ি থেকে লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে স্বামীসহ পরিবারের সদস্যরা সটকে পড়ে।

একমাত্র কন্যার মুতৃতে শোকে মুহ্যমান রেশমার বাবা আলমগীর মিয়া জানান, বিয়ের পর থেকেই তার মেয়ে য়ৌতুকের নির্যাতনের শিকার। গত শনিবার সন্ধ্যায় তার মেয়েকে অমানসিক নির্যাতন করা হয়।  নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে কীটনাশক সেবনে তার মেয়ে মারা গেছে। তিনি তার একমাত্র মেয়ে হত্যার সুষ্ঠু বিচার চান।

এ বিষয়ে মেহারী ইউপি চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন মোর্শেদ জানান, আমরা চেষ্টা করেছিলাম একটা সংসার না ভেংগে টিকিয়ে রাখতে। দুই পক্ষই মেনে নিয়েছিলো। এরপরও একটি অঘটন ঘটে গেলো।

কসবা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মহিউদ্দিন পিপিএম বলেন, খবর পেয়ে লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় নিহতের পরিবার একটি অভিযোগ দিয়েছেন। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট আসলে বিস্তারিত জানা যাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.