কে না চাই শান্তি…

শান্তি চাই, খাবার চাই, নিরাপত্তা চাই, নিশ্চয়তা চাই; শুধু চাই আর চাই যেন আজ অপরিহায্য উপাদানে পরিণত হয়েছে। সবাই এখন চাই আর চাই’এ মনযোগ দিয়েছে। শুধু চাই আর চাই। তবে এই চাই এ নিত্যদিনের প্রয়োজনীয়তা ছাড়া আর কি কি আছে তা এখন সবারই দেখা উচিত। কারণ এই চাই এ কিন্ত পৃথিবী আজ নাজেহাল। জীবনের এবং জীবিকার প্রয়োজনে যা চাই তা কি পাই বা তা পেয়ে কি সন্তুষ্ট; এই দুটি দিকও ভেবে দেখে আগামীর করনীয় ঠিক করা উচিত। সবকিছু পেয়ে কি সৃষ্টি সন্তুষ্ট হয়েছে অথবা সন্তুষ্টির স্তুতি গেয়েছে? এইসকল দিকও বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। ধনীক শ্রেণী আরো চাই, গরীব আরো চাই, রাজা-রানী, উজির, প্রজা এবং কর্মকর্তা ও কর্মচারী, কৃষক, শ্রমীক, মজুর, অন্ধ, বোবা, লোলা, আতুর, বেকার পশু-পাখি, জীবযন্তু, গাছপালা ও শিশুসহ সকলেই আরো চাই আরো চাই জপনাই মশগুল। তাই আরো চাই এর গতিময়তাকে স্তব্ধকরে পাওয়ার আনন্দের স্থায়ীত্ব এবং গভীরতা এমনকি নিশ্চয়তাই মনযোগ দিতে হবে। পাওয়ার আনন্দের চেয়ে দেয়ার আনন্দে মনোনিবেশ করতে হবে। তবে কোন কিছু করার বা পাওয়ার আগে ঐ কাজটুকু নিজে করে দেখাতে হবে। কারন পাওয়া নয় বরং দেয়াতেই আনন্দ উপভোগ্য।
একটি উদাহরণও এখানে আসতে পারে; যেমন- ইতিহাস ও আসমানী কিতাবের বিবরণ থেকে পাওয়া সত্যের আলোকে বলা যায় যে, বাদশাহ সোলায়মান ছিলেন পৃথিবীর সকল কিছুর মালিক এবং তিনিই পৃথিবীর সকল কিছুকে নিয়ন্ত্রণ করতেন। তবে এতকিছু পাওয়ার পরেও তিনি শান্তিতে ছিলেন না বরং আরও পাওয়ার আশায় মশগুল ছিলেন। আর ঐ পাওয়ার আশা-ই তাকে শান্তিতে থাকতে দেয়নি। যেমন তিনি একদিন খায়েশ করে দেখতে চেয়েছেন; এমনকি সমস্ত পৃথিবীর সকল সৃষ্টিকে একবেলা খাওয়ানোর খায়েশ করেছিলেন; কিন্তু তাতে সৃষ্টিকর্তা (আল্লাহ) তাকে নিষেধ করেছিলেন কিন্তু নাছোর বান্দা ছোলায়মান তারপরও আল্লাহর কাছে চেয়ে ঐ খাওয়ানোর কাজে নিমঘ্ন হলেন এবং যাবতীয় ব্যবস্থা সম্পন্ন করে খাওয়ানো শুরুও করলেন কিন্তু তিনি তাঁর সমস্ত আয়োজন দিয়ে একটি সামুদ্রিক মাছকেও সন্তুষ্ট করতে পারলেন না। বরং বাকী সৃষ্টি অভুক্তই রয়ে গেল। এতে কি বুঝা যায় মানুষ সকলের দায়িত্ব নিতে পারেন না; বরং সকলকে খাওয়ানোর দায়িত্বও মানুষের না। বরং যার যে কাজে সৃষ্টিকর্তার দান বা আশির্বাদ রয়েছে সেই কাজটুকু আন্তরিকতার সহিত সম্পন্ন করাই উত্তম। কোন মানুষ শান্তি দিতে পারে না এমনকি শান্তি বিরাজমান রাখাও কোন মানুষের পক্ষে সম্ভব না। শান্তি দেয়া একমাত্র শান্তিরাজের পক্ষেই সম্ভব। বাদশাহ সোলাইমানের একটি উক্তি হলো “জীবনের সমস্ত কিছুই বাতাসের পিছনে দোলা নলখাগড়ার মত”; বা বাতাসে উড়ানো ছাইয়ের মত; তাই যদি হয় তাহলে কেন এত চাই চাই আর খাম খাম?
পৃথিবীর এই কঠিন সময়ের চাহিদায় প্রথমে এবং প্রধান কাজ হলো শান্তি অন্বেষণ ও শান্তি উপভোগসহ শান্তির নিশ্চয়তা বিধান করা। আর এই শান্তির তরে বিশ্বে এখন বিরাজমান রয়েছে, যুদ্ধ, কথার ফুলঝুড়ি, পরিকল্পনার নানান বাহারি আয়োজন এবং উপস্থাপন ও বাস্তবায়নের চেষ্টা। তবে এইসকল কিছুর মধ্যেই শান্তি নিহিত নয় বরং শান্তি বিরাজমান রয়েছে নিলোর্ভ, নিরহংকার, পরোপকারী স্বভাবের চর্চায়। চাই-চাই এবং খায় খায় স্বভাবে এবং এর নিমিত্ত্বে বিরাজমান সকল কাজে শান্তি নেই। বর্তমানের রাজা-বাদশাহ থেকে ফকির পর্যন্ত কারোরই জীবনে এখন শান্তি নেই। তাই তারা নিজের প্রয়োজনে শান্তির অন্বেষনে বিভিন্ন কর্ম এবং কার্য সম্পাদন করে যাচ্ছে। বিশ্ব শান্তির জন্য ফিরে যেতে হবে সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টির রহস্যে এবং সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত শান্তির অমিয় বানীতে। তিনিতো বলেছেন; তোমাদের জন্য আমার পরিকল্পনার কথা আমিই জানি, সেই পরিকল্পনা তোমাদের মঙ্গলের জন্য; তোমাদের ক্ষতির জন্য নয় বরং সেই পরিকল্পনার মধ্যেদিয়েই তোমাদের ভবিষ্যতের আশা পূর্ণ হবে”। আরো জানতে পারি হযরত ঈসা মসিহ সম্পর্কে সৃষ্টিকর্তার কালামে তিনি (ঈসা মসিহ) বলেছিলেন যে, আমার প্রতি শান্তি ছিল যেদিন আমি জন্মগ্রহন করেছি, যেদিন আমার মৃত্যু হবে এবং যেদিন আমি মৃত্যু থেকে পুনরুত্থিত হবো। আবার তিনিই তাঁর জীবদ্দশাই বলেছিলেন “আমারই শান্তি আমি তোদাদেরকে দিয়ে গেলাম।” এই কথাগুলোর মধ্যেও রয়েছে স্থায়ী শান্তির আবাস এবং নিশ্চিত উপভোগ্য শান্তির সুবাতাস।
তবে এই শান্তি আনয়নের জন্য কত কিইনা করে থাকেন আমাদের সেবকরা বা শাষনকর্তারা। পাকিস্থান থেকে বাংলাদেশের জন্মও কিন্তু হয়েছিল পূর্ণাঙ্গ শান্তির জন্য। কিন্তু কি হয়েছে? কেন হয়নি, কিসের অভাব ছিল? কাদের জন্য হয়নি? ওরা কারা? কিইবা ছিল তাদের উদ্দেশ্য। আজও কি ঐসকল লোকেরা বা তাদের মনেবৃত্তি লালনকারীরা দৃশ্যমান বা অদৃশ্য হিসেবে রয়েছে? বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব নিলোর্ভভাবে সকল কিছুই করেছিলেন কেনইবা সেই কাঙ্খিত শান্তি প্রতিস্থাপিত হয়নি? ভেবে এবং খতিয়ে দেখে বিশ্লেষণ করে আগামীর করনীয় ঠিক করবেন। তৎপরবর্তীতে জিয়া-এরশাদ-খালেদাগংরা কেনইবা পারেননি শান্তিকে পুণপ্রতিষ্ঠীত করতে তাও খোজে দেখেন এবং সেই অনুযায়ী আগামীর করণীয় ঠিক করুন। বর্তমানে যে সরকার রয়েছে সেই সরকারইবা কি কম করেছেন বা করতে চাচ্ছেন তাহলে কেন আজও শান্তি পুনপ্রতিষ্ঠিত হলো না বা হওয়ার পথে অন্তরায়গুলো কি কি তাও খোজ করুন এবং সেই অনুযায়ী আগামীর করণীয় ঠিক করুন। তারপর সকল বিশ্লেষণের আলোকে বের হওয়া রাস্তায় সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছা ও পরিকল্পনাকে প্রাধান্য দিয়ে অগ্রসর হউন। শান্তি পুনপ্রতিষ্ঠিত হবে সুনিশ্চিত।
বাংলাদেশে শান্তি পুনপ্রতিষ্ঠিত করতে শেখ হাসিনা সরকার যে সকল পদক্ষেপ নিয়েছে তার আদলে জাতির সকল স্তরের মানুষজন সমর্থন ও সহযোগীতা করলে আগামীতে শান্তি পুর্নপ্রতিষ্ঠা লাভ করবে তবে যারা এর বিরুদ্ধাচারণ করছেন তাদের জীবনেও শান্তি পুণপ্রতিষ্ঠা দরকার। ঐ বিরুদ্ধাচারীদের বাদ দিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা যাবে না বরং শান্তির বিপরিতে অশান্তিই বিরাজমান থাকবে। তবে উভয়েরই শান্তি দরকার এবং এই শান্তি চিরস্থায়ী বা আখেরী শান্তির আদলে হওয়া উচিত। আর তা হতে হলে প্রয়োজন চাওয়া পাওয়ার হিসেব নিকেশ বাদ দেওয়া এমনকি চাই চাই আরো চাই মনোভাব পরিবর্তন করা অথবা খাই খাই স্বভাবের সকল কাজ বিসর্জন দেয়া। এখন বাংলাদেশে প্রয়োজন নির্লোভ, নিস্বার্থ এবং নিরহংকার মনোভাব বাস্তবায়ন করে পরোপকারী স্বভাবের চর্চা পুনপ্রতিষ্ঠা করা। প্রত্যেকে আমরা পরের তরে জীবন যাপন করাই এই সময়ের উপযুক্ত উত্তম কাজ। ঈশ্বর, ভগবান, খোদা, আল্লাহ এমনকি আরো যেসকল উপাধি বা নামে ডাকেন সেই সকল নামের ঐক্যবদ্ধ রূপ-রস-গন্ধ মিশানো প্রচেষ্টায় সৃষ্টিকর্তা হিসেবে সৃষ্টির মাহত্বে দৃষ্টি নিবন্ধন করি। আর বাবা আদম ও মা হাওয়া থেকে আগত সকলের আগমন ও প্রস্থানের দিকে গভীরভাবে পর্যালোচনা করি; তার জীবনের এবং সৃষ্টির ও সৃষ্টিকর্তার নিঘূঢ় তথ্য জানার কাজে মনোনিবেশ করে চিরস্থায়ী শান্তির ব্যবস্থাকে পাকাপোক্ত করে বিশ্বময় শান্তি বিরাজমান রাখি। বর্তমান বিশ্বে শান্তির বড়ই অভাব আর এই অভাবে সৃষ্টিকর্তার শেখানো ও দেখানো পথেই একমাত্র মুক্তি; এর বাইরে আর কোন সুযোগ নেই বরং বিভ্রান্তি এমনকি অশান্তির বিজ রোপনই আরো বেপোরোয়া গতিতে শান্তি বিঘ্নিত হওয়ার কায্যসম্পাদন করবে। তাই ফিরে আসুন সুষ্টিকর্তার দেখানো পথে এবং উপভোগ করুন নির্মল শান্তি, নিশ্চয়তা, নিরাপত্তার অভয়ারণ্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published.