প্রশান্তি ডেক্স॥ গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে রুবেল হত্যার ১৯ দিন পর চাঞ্চল্যকর ও ক্লুলেস এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন করেছেন র্যাব ৬। এই হত্যা মামলায় দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতার দুজন হলেন- খুলনার তেরখাদা উপজেলা সদরের হুসাইন ইমাম (৩০) ও গোপালগঞ্জ সদরের এস এম ফেরদাউস সবুজ (৩৭)।
গত বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) দুপুরে খুলনার লবণচরায় র্যাব ৬ এর সদর দফতরে এই ঘটনায় একটি এ প্রেস ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়। সেখানে র্যাব ৬ এর পরিচালক লে. মোহাম্মদ মোসতাক আহমদ বলেন, এই হত্যায় পাঁচ জন জড়িত থাকার তথ্য এখন পর্যন্ত পাওয়া গেছে। আসামিরা কারাগারে পরস্পর পরিচিত হয় এবং সেখানেই একটি দামি গাড়ি ছিনতাই ও হত্যার পরিকল্পনা করে। আসামিরা উচ্চ শিক্ষিত ও প্রযুক্তি জ্ঞান সম্পন্ন।
তিনি বলেন, একটি অতিলোভী ও দুষ্কৃতিকারী চক্র দেশের বিভিন্ন স্থানে নানাবিধ অনৈতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করে আসছিল। তারা দেশের বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণের উদ্দেশে যায় এবং ফিরে আসার সময় গাড়ি ভাড়া করে পরিকল্পনা অনুযায়ী নির্দিষ্ট গন্তব্যে নিয়ে যায়। এরপর গাড়ির চালককে মারধরসহ হত্যা করে গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যায়। পরে বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করে। এমনই একটি ক্লুলেস ও রোমহর্ষক হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয় গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে। এ সংক্রান্তে মুকসুদপুর থানায় অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা হয়।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ঘটনার পর থেকেই র্যাব তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও ছায়া তদন্ত করে। র্যাবের তথ্যপ্রযুক্তি, গোয়েন্দারা দিন-রাত অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে এই ক্লুলেস হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করে। গত ২ নভেম্বর গাজীপুর থেকে এই ঘটনার মূলহোতা খুলনার তেরখাদা উপজেলা সদরের হুসাইন ইমাম ও গোপালগঞ্জ সদরের এস এম ফেরদাউসকে গ্রেফতার করা হয়।
তিনি বলেন, আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাইভেট কার গাড়ি চালক রুবেল হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে এবং এই রোমহর্ষক ঘটনাটি বর্ণনা করে। তারা জানায়, অস্ত্র, দস্যু ও প্রতারণাসহ বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার হওয়ার পর জেলখানায় তাদের পরিচয় হয়। সেখানেই এসব অপরাধের পরিকল্পনা করে। আসামিরা ঘটনার কয়েকদিন আগে গাজীপুরে একত্রিত হয় এবং একটি হোটেলে ঘটনাটির চূড়ান্ত পরিকল্পনা করে। গত ১৫ অক্টোবর তারা একত্রিত হয়ে পটুয়াখালী জেলার কুয়াকাটার উদ্দেশে যাত্রা করে। পথিমধ্যে চেতনানাশক ওষুধসহ একটি সিরিঞ্জ কেনে।
লে. মোসতাক আহমদ বলেন, কুয়াকাটায় ভ্রমণ শেষে ছিনতাইয়ের উদ্দেশে নতুন ও ব্যয়বহুল গাড়ির সন্ধান করতে শুরু করে। চক্রটি একটি নতুন মডেলের ব্যয়বহুল প্রাইভেট কার ভাড়া করে। গত ১৬ অক্টোবর রাত ৯টার দিকে কুয়াকাটা থেকে গোপালগঞ্জ জেলার ভাটিয়াপাড়ার উদ্দেশে যাত্রা করে। পথিমধ্যে চালক রুবেলের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করে। আলোচনাকালে আসামিরা গাড়ির মালিক ও গাড়িতে ব্যবহৃত ট্রাকিং ডিভাইসটির তথ্য সংগ্রহ করে। গাড়িটি গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী পৌঁছালে পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা চালকের সংগে ঝগড়ায় জড়ায়। এক পর্যায়ে চালক রুবেল গাড়ির ব্যাক ঢালা খুলে তাদের ব্যাগ নামিয়ে দিতে যায়।
তিনি আরও বলেন, তখন চালককে পেছন থেকে ধরে এবং কৌশলে দেহে চেতনানাশক ওষুধ প্রয়োগ করে। এরপর চালক দুর্বল হয়ে পড়লে তাকে মারধর করে হাত-পা স্কচটেপ দিয়ে বেঁধে এবং মুখমণ্ডলে স্কচটেপ পেঁচিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে। পরে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের একটি নির্জন এলাকায় লাশটি ফেলে দিয়ে তারা গাড়িটি নিয়ে গাজীপুরের উদ্দেশে পালিয়ে যায়। অভিযানে ওই গাড়িটি পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। আসামিদের গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।