সত্য আর মিথ্যার সংঘর্ষ

সত্য আর মিথ্য এখন নিয়মিত যুদ্ধ করে যাচ্ছে কিন্তু সত্যের খুবই কষ্ট হচ্ছে মিথ্যাকে পরাভুত করতে। ইদানিং মিথ্যাই যেন সরবৈব অবস্থানে বিরাজমান। তবে সত্যের জয় স্থায়ী এবং দীর্ঘসময় ক্ষেপনকারী আর ধৈয্যের শেষ নির্যাসে এসে কখনো কখনো ঘটে আবার তারও একটু দেরী হয় বটে। কিন্তু আমরা পৃথিবীতেই সত্যের জয় দেখেছি এবং দেখব আর ইতিহাস এবং বিভিন্ন প্রত্যক্ষ দেখা ঘটনার নিরীখে এই সিদ্ধান্তে নিশ্চিত উপনিত হওয়া যায় যে, সত্যের জয় সুনিশ্চিত। কথায় আছে সত্যের নৌকা সাতবার ডুবলেও সাতবারই ভেসে উঠে। আর মিথ্যার নৌকা একবার ডুবলেই সুনিশ্চিত পরাজয়। এই ক্ষেত্রে সৃষ্টিকর্তার পবিত্র কালামও একই স্বাক্ষি দেয় যে, সত্যের জয় সুনিশ্চিত। মিথ্যা মিথ্যাই আর মিথ্যা কখনো সত্যের উপর জয়ী হতে পারে না। সত্য স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা আর মিথ্যা হলো শয়তান বা সকল নেতিবাচকতা এবং ধ্বংশ্বাত্মক ও ব্যক্তি আর গোষ্ঠিকেন্দ্রীক স্বার্থপরতা; যা বৃহত্তর কল্যাণে বাধাগ্রস্থ্যকারী এবং সার্বজনীন কল্যাণে ক্ষতির কারণ বটে।

পৃথিবীতে আজ সত্য এবং মিথ্যা মুখোমুখী সংঘর্ষে লিপ্ত। তবে মাঝে মাঝে সত্যের পরাজয়ও প্রত্যক্ষ করছি; এর কারণ কি? কেন এই পরাজয়? তবে আমার আপত দৃষ্টিতে এই পরাজয় শুধু আমাদেরই জন্য। মানুষ সত্যকে নিয়ে অগ্রসর হতে এমনকি সত্যের সঙ্গে বসবাস করতে ভয় এবং লজ্জ্বা পাচ্ছে; নিজ স্বার্থ হাছিলের জন্য অবৈধ এবং অনায্য সকল কর্মকান্ডে মিথ্যার সঙ্গে যুক্ত হয়ে দ্বীগুন গতিতে ঝাপিয়ে পড়ছে। যা হওয়ার কথা ছিল মিথ্যার বেলায় কিন্তু এখন তা ঘটেছে সত্যের বেলায়। আর এটা হয়েছে ধর্মীয় আবরণের গাফিলতির জন্য। যা বলি তা করিনা, যা মানি তা কার্যে পরিণত করি না; যা বিশ্বাস করি তা মুখে বা কার্যে পরিণত করি না। এই হলো আমাদের ঈমান ও আমল। স্ব স্ব ধর্মে সত্যের বিষয়টি স্পষ্ট এবং সার্বজনীন। সত্যের বেলায় কোন ধর্মেই এর অমীল নেই। সৃষ্টিকর্তার সত্য সব ধর্মেই সুস্পষ্ট কিন্তু পালনের ক্ষেত্রে এর বৈষম্যতা লক্ষনীয়। মিথ্যাকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য এখন সত্যকে ব্যবহারে মরিয়া বিশ্ব। ঈমান ও আমল শুধু কথায় এবং মিথ্যাকে প্রতিষ্ঠিত করণের লক্ষে কাজে লাগছে। তাই এই ভয়ঙ্কর মিথ্যা জাদুর অবস্থান থেকে বের হওয়ার উপযুক্ত সময় এখনই। একমাত্র ধর্মীয় শিক্ষা এবং আবরণ ও এর কার্যকর ব্যবহারই পারে মিথ্যাকে পরাজিত করতে। আর সত্যের ধর্ম প্রকাশিত হওয়া এবং মিথ্যার ধর্ম হলো লুকিয়ে আড়ালে বা গোপনে পলায়ন করা তাই সত্য প্রকাশে এবং সত্যের ব্যবহারিক চর্চায় মিথ্যাকে পরাজিত করা এখন সময়ের ব্যাপার। তাই আসুন সত্য মিথ্যা যাচাইকরণে সত্যের ব্যবহার এবং কায্যে পরিণত করার কাজটুকু সমন্বয় করে সকল কর্মকান্ডে অগ্রসর হই।

বিশ্বে এখন যেসকল নৈরাজ্য বা বিভিষিকাময় অন্ধকার বিরাজমান তা কিন্তু সত্যের আবরণে মিথ্যার কল্যাণে নিয়োজিত। যুদ্ধ, হানাহানি, ক্ষমতা, অর্থ-বিত্ত্ব এবং বৈভব এর লোভে মিথ্যাকে সত্যের আবরনে দ্বার করিয়ে সকল অন্যার্য সম্পাদন করে যাচ্ছে। তাই সত্যপ্রীয় এবং সত্যানুসন্ধানীজন এখনই এই মিথ্যার বিরুদ্ধে সত্যের আবরণের ব্যবহারিক জাগরণে মিথ্যাকে দুর করুন এবং মিথ্যা দুর হলেই সত্য প্রকাশীত হয়ে শান্তি, নিশ্চয়তা এবং নিরাপত্তার অভয়ারণ্যে বিশ্ব ছয়লাভ হবে। সৃষ্টিকর্তা এখন সত্যানুসন্ধানীদের খুজছেন এবং স্ব মহিমায় উদ্ভাসিত হওয়ার জন্য তাদেরকে ব্যবহার করতে চাইছেন; কিন্তু এই ক্ষেত্রে আমাদেরকে সৃষ্টিকর্তার নিকট আত্মসমর্পন করে সৃষ্টিকর্তাকে সুযোগ দিতে হবে যেন, তিনি আমাদেরকে ব্যবহার করে সত্যকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে পারেন। সৃষ্টিকর্তার সাহায্য এবং নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা আর সুরক্ষা নিয়ে এগিয়ে যেতে ঐ আত্মসমর্পন এবং ব্যবহৃত হওয়ার আকাঙ্কাই যথেষ্ট। তাই সময় আসন্ন আপনার ও আমার জন্য; প্রস্তুত হউন এবং কায্যে নেমে পড়ুন।

এবার আসি আমাদের এই প্রীয় মার্তৃভুমি বাংলাদেশের দিকে। চারিদিকে এখন মিথ্যার ফুলঝুড়ি আওড়ানো ছাড়া আর যেন কোন কাজই নেই। তবে মিথ্যা এবং মিথ্যার সংঘর্ষ হওয়া জরুরী। এই ক্ষেত্রে অগ্রসরও হতে দেখা যাচ্ছে। ক্ষমতা প্রদর্শন এবং জনক্ষমতাকে ব্যবহার করেই মিথ্যাকে প্রতিষ্ঠীত করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে কিছু স্বার্থান্বেষী মহল। যা অগেও হয়েছিল এবং বর্তমানে হচ্ছে আর ভবিষ্যতে হওয়ার সুযোগ সৃষ্টিতে কাজ করে যাচ্ছে। ইদানিং মহাসমাবেশ এবং গণজমায়েতের হাক ডাক শোনা এবং দেখা যাচ্ছে। এটা কিসের লক্ষ্যণ? শাক দিয়ে মাছ ডাকার? আমি বলি মিথ্যা দিয়ে সত্যকে আড়াল করার। এই ক্ষেত্রে বলা যায় শিলে পাটায় ঘষাঘষি মরিচের জীবন শেষ। শুদ্ধ ভাষায় শিল নুড়ায় ঘষাঘষিতে মরিচের বারোটা বেজে যাচ্চে; পক্ষান্তরে সত্য ও মিথ্যা দ্বন্ধের মাঝখানে এখন জনগণ (আমি ও আমরা) তাই সাবধান হউন ঐ দ্বন্ধেতে শরিক না হয়ে বরং প্রকাশিত সত্যকে মিথ্যাদিয়ে আড়াল করতে না দেয়ার কাজটুকুতে মনযোগ দিন। তারা কেউ ধুয়া তুলসি পাতা নয় বরং কাঠির এপিঠ ও ওপিঠ উভয়টাই সমান। তবে এই ক্ষেত্রে কার্যকর কল্যাণের তরে অগ্রগামীদের আরেকটি সুযোগ দিন যাতে তারা সত্যের সঙ্গে বসবাস করতে পারে এমনকি মিথ্যাকে পরাভুত করতে সত্যকে ব্যবহার করে অগ্রসর হতে পারে।

এখানে একটি বিষয় হলো যে, মিথ্যার বাগাড়ম্বরে যেন আমরা (সত্য) আজ “বড়ি কইলেও মরি আর টরি কইলেও মরির” দশায় পরিণত হয়েছি। এইক্ষেত্রে সত্যকে সত্য দিয়েই প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। মিথ্যা দিয়ে সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করা যায় না। আর সত্যদিয়ে মিথ্যাকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা থেকে বিরত থাকুন। মহান সৃষ্টিকর্তা আপনাকে, আমাকে এবং আমাদেরকে সহযোগীতা করছেন, করবেন এটা শতভাগ নিশ্চিত। কারণ সত্যই হলো সৃষ্টিকর্তার বহি:প্রকাশ। সততার আবরণেই তিনি তাঁর সকল কিছু প্রকাশ করেছেন। আজ একটি বিষয় বলতে কষ্ট হলেও বলতে চাই; কারণ ঐ মানুষগুলোকে শ্রদ্ধা এবং সম্মান করাই আমাদের মত সত্যানুসন্ধানী মানুষদের একমাত্র আদর্শীক অবলম্বন। তারপরও বলছি; ইদানিং পুর্বের ব্যার্থরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। বৈশ্বিক মন্দা এবং দুর্দশার স্বীকারের ছোয়ায় আমরা যখন দিশেহারা হয়ে স্বস্তীর নি:শ্বাস নিতে চাচ্ছি ঠিক তখনই কথায়, আচরণে, কার্যে এবং চক্রান্তে পরাভুত করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। তবে ইদানিং এর অসংলগ্ন মুখসৃত বানীই তাদেরকে পরাভূত করতে যথেষ্ট যদি একটু বুদ্ধি দিয়ে বিবেচনা করে অগ্রসর হই। শ্রদ্ধেয় জনাব মির্জা ফখরুল সাহেব মিটিংয়ে বলেই ফেললেন যে, আই এম এফ এর ঋণ আমাদের জন্য বোঝা; এটা একটি ডাহা মিথ্যা কথা বরং এই ঋণ বাংলা এবং বাংগালী জাতির জন্য আশির্বাদ। মিথ্যা বলে মানুষকে উত্তেজিত করার কি দরকার! অপরদিকে যদি আই এম এফ ঋণ না দিত তাহলে সত্য বলে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার যথেষ্ট কারণ এবং সুযোগ থাকত। এই ক্ষেত্রে আরেকটি বিষয় হলো অজ্ঞতা একটি মরণ ফাঁদ আর সেই ফাঁদেই পা দিচ্ছেন মিথ্যার রূপদানকারীরা। কারণ তারা বলছে সরকার ঐ ঋণ পরিশোধ করতে পারবে না এমনকি ঐ ঋণের টাকা ব্যবহারও করতে পারবে না তাহলে আমার প্রশ্ন আপনি কিভাবে ঐ ঋণ পরিশোধ করবেন এবং ঐ ঋণ ছাড়া আপনি কিভাবে বর্তমান বৈশ্বিক সংকট উত্তরণ করবেন? শুধু কথার কথায় কান না দিয়ে বরং প্রত্যেকের কথার গভিরতা এবং বাস্তবতা ও বৈশি^ক অবস্থানের বিশ্লেষনে মিলিয়ে নিবেন এবং নিজ নিজ অবস্থান ও চলমান অগ্রসরতার জাগরণকে আরো গতিতে এগিয়ে নেয়ার কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখবেন। কারো কথার ফাঁদে পা দেবেন না এমনকি মিথ্যার কাছে পরাভুত হবেন না বরং মিথ্যাকে পরাভুত করতে নিজ নিজ দায়িত্ব এবং ভুমিকা পালনে সচেষ্ট থাকুন। সত্যকে চিনুন, সত্যকে জানুন, সত্যের সঙ্গে থাকুন। মিথ্যাকে সত্য থেকে আলাদা করুন এবং মিথ্যাকে চিনে এর স্বরূপ উদঘাটন করে পরাভুত করুন। আমিই সত্য, আমিই পথ ও আমিই জীবন এই আলোকে অগ্রসর হউন। সত্য মিথ্যার দ্বন্ধ অবসানে আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করি এবং পৃথিবী থেকে মিথ্যাকে বিতারিত করে শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং নিরাপত্তা ও নিশ্চয়তা বিধানে কার্যকর ভুমিকা রাখি। জয় আমাদের হবেই এটাই নিশ্চিত জেনে অগ্রসর হউন কারণ স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা আপনার এবং আমার ও আমাদের সঙ্গে রয়েছেন এবং তিনিই ঐসকল প্রতিবন্দকতা দূর করে সফলতায় পর্যবসীত করবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.