বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের প্রকাশ্যে এত নসিহত না করাই ভালো: রাসিক মেয়র

প্রশান্তি ডেক্স॥ রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) মেয়র ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেছেন, ‘ইদানীং লক্ষ করছি, বিদেশি রাষ্ট্রদূতরা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়ে অনেক বেশি কথা বলছেন। এমন সব কথা বলছেন যা শোভনীয় ও বাঞ্ছনীয় নয় এবং তাদের বলাটা উচিতও নয়। এটা দিন দিন বাড়ছে।’

গত বৃহস্পতিবার (১৭ নভেম্বর) বেলা ১১টায় নগর ভবনে মেয়র দফতর কক্ষে বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।

রাসিক মেয়র বলেন, ‘বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের বক্তব্য নিয়ে আমাদের দলের নেতৃবৃন্দ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। আমিও মনে করি, দেশের নির্বাচন কী পদ্ধতিতে হবে, কীভাবে হবে তা দেশের সরকার, জনসাধারণ ও নির্বাচন কমিশন ঠিক করবে। বিদেশিদের প্রকাশ্যে এত মতামত প্রকাশ করা বা নসিহত না করাই ভালো।’

বিএনপির আন্দোলন ও আওয়ামী লীগকে দেওয়া আল্টিমেটাম প্রসঙ্গে খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘বিএনপি হলুদ কার্ড, লাল কার্ড ইত্যাদি দেখাচ্ছে; সে তো অনেক আগে থেকেই দেখে আসছি। ২০১৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত অসংখ্যবার তারা কার্ড দেখিয়েছে। সে হিসেবে বাংলাদেশে তো আওয়ামী লীগ সরকার থাকারই কথা ছিল না। বিএনপির কথাগুলো রাজনীতির মাঠ গরম করার জন্য বলা। তারা তাদের নেতাকর্মীদের মনোবল চাঙা করার জন্যই হয়তো বলছে। আসলে তাদের সেই সক্ষমতা থাকলে অনেক আগেই এটা কার্যকর করতে পারতো। যেটা তদের নেই। যাকে বলা হয় ফাঁকা কলসি বাজে বেশি।’

তিনি বলেন, ‘চীন বর্তমানে আমাদের অত্যন্ত বন্ধুপ্রতিম একটি দেশ এবং অন্যতম প্রধান উন্নয়ন সহযোগী। অধিকাংশ বড় বড় অবকাঠামোগুলো তাদের কোম্পানি ও প্রকৌশলীদের মাধ্যমেই নির্মিত হচ্ছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে আমরা উপকৃত হবো। আমার সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তিনি রাজশাহী মহানগরীর পরিচ্ছন্নতা ও সবুজায়নের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।’

মেয়র লিটন বলেন, ‘২০১৬ সালে বাংলাদেশ ও চীনের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর হয়। সেই চুক্তিতে পদ্মা নদীর পানি পাম্প করে গোদাগাড়ী পৌরসভা, কাটাখালী পৌরসভা, নওহাটা পৌরসভা এবং রাজশাহী সিটি করপোরেশনে পাইপলাইনের মাধ্যমে সরবরাহ করা হবে। সেটা সর্বশেষ পর্যায়ে রয়েছে। সবশেষ একটা স্বাক্ষর হলেই চায়নিজ এক্সিম ব্যাংক প্রথম কিস্তিটি ছাড় করবে।’

চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বলেন, ‘রাজশাহীতে খুব স্বল্প সময়ের জন্য সফরে এসেছি। এই সময়ের মধ্যে রাজশাহী নগরী ঘুরে আমি মুগ্ধ হয়েছি। রাজশাহী গ্রিন এবং ক্লিন সিটি (সবুজ এবং পরিষ্কার শহর)। এই শহরের খুব উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ রয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘রাজশাহী বিভাগের পাবনায় অবস্থিত ইপিজেডে চীনের পাঁচটি কোম্পানি কাজ করছে। এছাড়া আরও ছয়টি কোম্পানি আসছে। আরও কোম্পানি বাংলাদেশের এই অংশে বিনিয়োগের জন্য আগ্রহী। বাংলাদেশে ব্যবসার ভালো পরিবেশ থাকায় আমরা আগ্রহী হচ্ছি।

এর আগে, চীনের রাষ্ট্রদূতের আগমনে নগর ভবনের প্রধান ফটকে তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান রাসিকের কাউন্সিলর ও কর্মকর্তারা। বর্ণাঢ্য আয়োজনে চীনের রাষ্ট্রদূতকে বরণ করে নেওয়া হয়। এ সময় রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র, কাউন্সিলর ও রাসিকের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে চীনের রাষ্ট্রদূতকে আম আকৃতির শুভেচ্ছা স্মারক ও বিভিন্ন উপহার সামগ্রী প্রদান করেন রাসিক মেয়র। রাসিক মেয়রকেও উপহার দেন রাষ্ট্রদূত।

উল্লেখ্য, গত সোমবার (১৪ নভেম্বর) রাজধানীর গুলশানে একটি হোটেলে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) এবং ফ্রেডরিক অ্যাবার্ট স্টিফটুং (এফইএস) আয়োজিত ‘মিট দ্য অ্যাম্বাসেডর’ অনুষ্ঠানে এক প্রশ্নোত্তরে জাপানি রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি বলেছিলেন, ‘বিগত জাতীয় নির্বাচনে পুলিশের কর্মকর্তারা আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভর্তি করেছেন। আমি অন্য কোনও দেশে এমন দৃষ্টান্তের কথা শুনিনি।’

Leave a Reply

Your email address will not be published.