উন্নয়ন ও সার্বজনীন সমন্বয়

উন্নয়ন ও সার্বজনীন সমন্বয় একটি গুরুত্ব সামষ্টিকতা। এই সামষ্টিকতায় একত্রিকরণের জটিলতা নির্মূলে কাজ করা জরুরুী। কে না চায় উন্নয়ন আর কারইবা আখাঙ্খা নেই উন্নয়ন করার। ব্যক্তি উন্নয়ন থেকে শুরু করে পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক এবং রাষ্ট্রিয় সকল উন্নয়নই সকলের কাম্য। এই উন্নয়নের সঙ্গে জড়িত সকলেই। তবে এই ক্ষেত্রে আমার অবস্থান একটু ভিন্ন। যেখানে সকলেই উন্নয়নে জড়িত তবে সেখানে কেন দ্বিমত ও দ্বন্ধ এবং হিংসা আর প্রতিহিংসা? এই উন্নয়ন নিয়েই এখন সকলের জল্পনা ও কল্পনা। উন্নয়ন ঘিরেই তৈরী হয় বিভিন্ন রকমের পরিকল্পনা। উন্নয়নকেই সামনে নিয়েই অগ্রসর সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ। কিন্তু তারপরও উন্নয়ন নিয়ে দ্বৈত অবস্থানের চিত্র ফুটে উঠে। যেমন রাজনীতি ও সমাজনীতিতে আর সংস্থা এবং সংস্থার মধ্যে। একই দলের বিভিন্ন উন্নয়নকামীদের মাঝে। তাই এই উন্নয়নই এখন একটি সমস্যা বটে। উন্নয়ন সমস্যাকে জঞ্জালমুক্ত করতে এর সমাধনকল্পে যুগপোযোগী এবং কার্যকরী পদক্ষেপ নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।

ইদানিং দেখা যাচ্ছে একই মুখে দুই ধরনের কথা। একজনের উন্নয়নে আরেকজনের বাধা। এই উন্নয়ন নিয়ে বিভিন্ন ভাবনার সমন্বয় দরকার। বিভিন্ন জনে বিভক্ত উন্নয়নের এখন সময় ঐক্যবদ্ধ জাগরণ। উন্নয়ন সমন্বয় সাধন এখন জরুরী হয়েছে এবং বিভিন্ন সংস্থার উন্নয়ন খরচ কমানোর একটি সুযোগও তৈরী হওয়ার ব্যবস্থা উন্মোচন জরুরী হয়ে পড়েছে। একটি রাস্তা উন্নয়ন হয়েছে কিন্তু আরেকটি সংস্থার উন্নয়নের প্রয়োজনে ঐ রাস্তা কেটে চিরে আবার নতুন উন্নয়নের তোরজোরে রাষ্ট্রের অথবা উন্নয়নের প্রয়োজনে নেয়া লোনের টাকা অপচয় হচ্ছে। প্রধান দেয়া অনুশাসনের অবাধ্যতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। কৃচ্ছতা সাধিত হয়নি বরং সমন্বয়ের অভাবে এবং উন্নয়ন ঐক্যবদ্ধ কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা রক্ষার অভাভে দেশ ও দশের ক্ষতি হচ্ছে এবং জনদুর্ভোগের রেশ কাটতে না কাটতেই জনজিবন বিপন্ন হচ্ছে। উন্নয়ন ভোগ করার ফলে উন্নয়নবিমুখতায় জাতি পর্যবসিত হতে উৎসাহি হচ্ছে। এই ক্ষেত্রে উদাহরণ হিসেবে হাজারো থেকে একটি হলো তিনশত ফিট রাস্তার অবস্থা।

অপরদিকে গত কয়েকদিন আগে ঢাকার দক্ষিনের মেয়র সাহেব একটি অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিয়েছেন উন্নয়ন নিয়ে। তিনি বলেছেন তার উন্নয়নে বাধা হলো পরিবেশবাদীরা। তারা গাছ কাটা নিয়ে সমালোচনা করেন এমনকি কোর্ট আদেশসহ নানাভাবে উন্নয়নে বাধা সৃষ্টিসহ সমালোচনা মুখর থাকেন। এইখানে মেয়র সাহেব বলেছেন পরিবেশ এর ভারসাম্য রক্ষায় তিনি একটি গাছ কাটলে আরো তিনটি গাছ রোপন করেন। সবই ঠিক। যার যার অবস্থান ও চিন্তা এবং কর্ম থেকে সবাই সঠিক। অপরদিকে আবার উত্তরের মেয়র সাহেব গাছ কাটতে এমনকি ওনার সিটিতে পরিবেশের ক্ষতিতে বিস্ফোরণ বক্তব্য রাখছেন। তিনি গাছ রেখেই উন্নয়ন সাধন করছেন। তিনি সকলের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে কাজ করছেন এবং করবেন। তার নিজস্ব নগর পরিকল্পনাবিধ এবং পরিবেশ সংরক্ষক রয়েছেন বলে তিনি তার বক্তব্যে উল্লেখ করেছেন। এই সবই ঠিক; কোনটিকেই বেঠিক বলার কোন সুযোগ নেই। তবে এই ক্ষেত্রে উন্নয়ন যোগ সাজস অথবা উন্নয়ন ঐক্য এমনকি জনসম্পৃক্ততা বৃদ্ধির ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়েছে। তবে এই সকল দূরকরণে দরকার সার্বজনীন এবং সামষ্টিক সিদ্ধান্ত। একক সিদ্ধান্ত থেকে বের হয়ে এসে সার্বজনীন ও সামষ্টিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে তৎপর হওয়া এমনকি সকলের অংশগ্রহন নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্ব দেয়া জরুরী হয়েছে পড়েছে। সকল উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণের পূর্বেই সকলের অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ নিশ্চিত করতে হবে। তারপর পরিকল্পনা নিয়ে বহুবিধ জরিপ এবং গভেষনা পরিচালনা করে অতীত এবং বর্তমানের সমন্বয়ে ভবিষ্যতের সকলকিছু সংযুক্তিকরণ করে জনসম্পৃক্ত নিশ্চিত করে অগ্রসর হলে উন্নয়ন তরান্বিত হবে এবং সকল সমালোচনা এবং প্রতিবন্ধকতার উর্ধ্বে থাকবে।

একটি উদাহরণ : এলকায় ডায়রিয়ার প্রকোপ। কিন্তু রেডিও এবং টেলিভিশনে প্রচারিত সচেতনতার শিক্ষা হলো সাবান দিয়ে হাত ধোয়া এবং পরিস্কার এবং পরিচ্ছন্ন থাকা ও ফোটানো অথবা টিউবলের পানি খাওয়া। কিন্তু সাবান কিনার সামর্থ নেই, এলাকায় টিউবওয়েল নেই, জলাশয়, খাল-বিল রয়েছে, ফুটিয়ে খাওয়ার ব্যবস্থাও নেই। তাই সমাধান আরো জানা দরকার। এই ক্ষেত্রে একটি অংশগ্রহণমূলক কর্মশালা বা নাটক উপস্থাপনের মাধ্যমে জানা যায় অনেক সমাধান। যেমন- সাবানের পরিবর্তে, ছাই, বালূ, মাটি, গাছের লতাপাতা দিয়ে হাত ধোয়া। চলমান জলধার থেকে স্বচ্ছ পানি সংগ্রহ করে ছাকনি দিয়ে বা কাপর দিয়ে ছেড়ে ব্যবহার করা। বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে খাওয়া, আগুনে ভালোভাবে পুড়ে বা সিদ্ধ করে খাবার খাওয়াসহ আরো অনেক। উপস্থিত জনগণ এক এক জন এক রকম অভিজ্ঞতার কথা বলে একটি সমাধানের স্থানে অনেক সমাধান হাজির করে সমস্যার মূলোৎপাটন করা সম্ভব। তাই আমাদের উন্নয়ন প্রতিবন্ধকতার ক্ষেত্রে এই সকল পদ্ধতি ব্যবহার করে প্রতিবন্ধক দের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এবং তাদের মুখবন্ধকরনে ঐক্যবদ্ধ কায্যসাধনে মনোনিবেশ করুন। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্টোরেল এবং বিভিন্ন প্রকল্পেও সংস্থায় সংস্থায় দ্বন্দে কাজের এবং সময়ের এমনকি অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুক্ষিণ হচ্ছে। তাই সরকারে এক সংস্থা আরো সংস্থা এবং আইন এমনকি সাধারণ জনগণ অথবা সংঘবদ্ধ জনগণ সকলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেই পরিকল্পনা করুন এবং সেইসকল লোকদেরকে নিয়েই সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করুন। তাহলে আর দৃশ্যমান সংকট চলমান থকবে না বরং উন্নয়ন হবে গতিশীল আর অর্থনীতি হবে সুদৃঢ়। দল মত নির্বিশেষে এই কর্মকান্ডের সুফল ঘরে তুলতে স্ব স্ব ভুমিকা রাখুন। যে বা যারা এই সকল কার্য্যের দায়িত্বে রয়েছেন আপনারা আপনাদের বর্তমান গন্ডি ছেড়ে অথবা খোলস ছেড়ে বের হয়ে আসুন এবং সকলের কথা শুনুন। নিজস্ব লোকদের পাশাপাশি অন্যদেরও কথা শুনুন এবং সকলের মতামতের সমন্বয়ে সামষ্টিক কথা, পরিকল্পনা নিজের মাধ্যমে প্রকাশ করে সকলকে নিয়ে ঐ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করুন। সকলেই আপনার সঙ্গে থাকবে। সকলেই স্ব স্ব অবস্থান থেকে সহায়তার হাত সম্প্রসারিত করবে। আর সকলের সমন্বয়েই আপনি মহান থেকে আরো মহান হয়ে উঠবেন। তখন সমালোচক এমনকি প্রতিবন্ধক আর খুজে পাওয়া যাবে না বরং সমন্বিত সর্বাত্মক সহায়ক পাবেন। উন্নয়ন এবং সুফল একসঙ্গে ভোগ করতে পারবেন। পৃথিবীর এই কঠিন সময়ে এই কার্যটুকু সাধন করা কঠিন হলেও এটিই একমাত্র মুক্তির দিশা ও পথ এবং মত হিসেবে সর্বমহলে স্বীকৃত আর গ্রহণযোগ। তাই আসুন খোদার (সৃষ্টিকর্তার) দৃষ্টিতে সকল মানুষই সমান এবং (সৃষ্টিকর্তার) খোদার কাছে গুরুত্বপূর্ণ তাই আমরাও একে অপরকে এই ভাবনায় গ্রহন এবং বরণ ও স্বীকার করে সাম্যের কাতারে ঈদ জামাতের ন্যায়ে আলিঙ্গনে আবদ্ধ করি। আর সকলের গুরত্বাকে অনুধাবক করে মূল্যায়নের মাধ্যমে ব্যবহার করি। তাহলেই উন্নয়ন ও সার্বজনীন সমন্বয় সাধিত হয়ে ফলপ্রসুতা দৃশ্যমান হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.