ক্ষমতার অন্তরালের প্রতিযোগীতা

নির্বাচনের পূর্বে প্রতিটি দেশেই ক্ষমতার লড়াই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে হয়ে থাকে কিন্তু উন্নত দেশে এবং উন্নয়নশীল দেশ আর অনুন্নয়নশীল দেশের লড়াইয়ে ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। তবে অনুন্নয়নশীল দেশ বা উন্নয়নশীল দেশের ক্ষেত্রে আবার ত্রিমাত্রিকাকারে উন্নত দেশের স্বার্থ্য বিবেচনায় ক্ষমতার পট পরিবর্তন হয়। আমার মূল্যায়ন ও বিবেচনায় পৃথিবীর কোন নির্বাচনই ফ্রি, ফেয়ার ও ক্রেডিবল এবং শতভাগ অংশগ্রহনমূলক হয়না। কথিত বা চলিত ভাষায় এই শব্দগুলো এখন শুধু শুভঙ্খরের ফাঁকি বা জনতার চোখে ধোলা দেয়া বা আই ওয়াস ছাড়া কিছুই না। আমেরিকার নির্বাচন যদি মডেল হয় আর ভারতের নির্বাচন যদি শিক্ষা হয় তাহলে বলতে হয় বাংলাদেশের নির্বাচনও একটি মডেল। কারন সব নির্বাচনেই খুঁত রয়েছে আর সেই খুঁতের আলোকে ভারত, আমেরীকা ও বাংলাদেশ একই কাতারে। কোন অংশেই উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশের সাথে বাংলাদেশের বিগত কয়েকটি নির্বাচন কম যায়নি। তাই নির্বাচন নিয়ে মাথা ঘামানোর ক্ষেত্রে জনগণ এবং বিদেশী রাষ্ট্রদূতগন যে তদবির এবং প্রকাশ্যে ও গোপনে দৌঁড়ঝাপ করছেন তার পেছনের রহস্য যদিও লুকায়িত কিন্তু তা আন্দাজে বা অন্তরালে প্রকাশিত। তাই এইসকল বিষয়ে এখন আর সাধারন আম জনতার কোন আগ্রহ বা অনাগ্রহ কোনটিই পরিলক্ষিত হয়না।

ভূ- রাজনৈতিক বিবেচনায় বাংলাদেশ তার স্বার্থ্য রক্ষায় এবং উন্নত দেশগুলো তাদের স্বার্থ্য রক্ষায় একটি দন্ধের খেলার দোলনচলে নির্বাচন হবে এবং নতুন সরকার আসবে এবং বাংলাদেশ ও বিশ্ব রাজনীতির খেলাও এগিয়ে যাবে। মাঝখানের বিষয়গুলো হলে কতিপয় দেশীয় মিরজাফর এবং স্বার্থান্বেষী মানুষ লাভবান হবে এমনকি নতুন করে মোনাফেক চেনা যাবে অথবা মির জাফরের আভির্ভাব হবে। শত্রুতা বৃদ্ধি পাবে। অনেক প্রাণের যবনিকাপাত ঘটবে, সম্পদ ও জান মালের ক্ষতি সাধিত হবে। উন্নয়ননের সুতিকাঘারে আঘাত আসবে আর চলমান উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে। সবই হবে অল্প কয়েক মাসের জন্য। তবে নির্বাচন পরবর্তীতে তা আবার স্বাভাবিক হবে এবং জনমনে স্বস্তিও ফিরে আসবে। কিন্ত যে ক্ষতি সাধিত হয়েছে তা আর কোনদিন ফিরে আসবে না এমনকি কোন ক্ষতিপূরণও পাওয়া যাবে না। সাধারণ জনগণ বা ক্ষতিগ্রস্তরা হারিয়ে যাবে সময়ে অন্তরালে। সময়ই বলে দেবে এবং পুর্বে দিয়েছেও; আমরা শুধু মনে রাখিনা এবং কায্যে ব্যবহার করিনা।

বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে সমারোহে খেলা চলছে এবং চলবে যার ধারাবাহিকতায় এখন এই দেশের জনগণ প্রত্যক্ষ করছেন। তবে সময়ের সঙ্গে পাল্লাদিয়ে বাড়ছে মীরজাফরদের মিরজাফরি। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আমাদের সমাজ, সংস্কৃতি ও দেশ সর্বোপরি রাজনৈতিক দলগুলো। এখানে বিএনপি, আওয়ামীলীগ এবং জাতিয় পার্টিসহ আরো অনেক দলেরই সর্বনাশ হচ্চে এবং হয়েছে ও হবে। তবে এর পরিসমাপ্তির জন্য সাধারণ জনগণ একটু সচেতন হলেই দেশীয় এবং বিদেশী মীরজাফরেরা এই দেশের কোন ক্ষতি করতে পারবে না। কারন এই দেশের সব রাজনৈদিক দলই আমাদের এবং এই দেশের তাই দেশের ক্ষতির দিকে বিবেচনা করে সকলেরই এগিয়ে আসা উচিত। ক্ষমতায় যাওয়া এবং ক্ষমতা থেকে বিতারিত করা অথবা নিজস্ব লোভ লালসা চরিতার্থ করা থেকে বিরত হওয়ার এখনই সময় এবং দেশ মার্তৃকার তরে চিন্তা করে সকলে মিলেই দেশ ভেবে কর্ম সম্পাদক করা উচিত। কারো প্ররোচনায় এবং উষ্কানিতে কোন পদক্ষেপ বা কর্মসূচি নেয়া উচিত নয়। কারো স্বার্থ রক্ষায় বোকার মত ঝাপিয়ে পড়ায় কোন বিরত্ব বা মহত্ব নেই। বরং দেশ রক্ষায় এবং দেশের কল্যাণে ঝাপিয়ে পড়াই উত্তম ও শ্রেয়। ব্যক্তি স্বার্থের চেয়ে সার্বজনীন দেশীয় স্বার্থেও দিকে মনযোগ দেয়া জরুরী। আইনকে শ্রদ্ধা ও সম্মান এবং পরিপালন করা উচিত। যদিও আইন আমার বিরুদ্ধে তারপরও আইন মেনে পদক্ষেপ নেয়া উচিত। তাইলে আজকে যে আইন আমার বিরুদ্ধে কালকে আবার সেই আইন আমার পক্ষে যাবে। আইন কাউকেই একতরফা সুরাক্ষা দিবে না বরং ক্ষণে ক্ষণে রূপ বদলাবে; এটাই আইনের স্বভাব।

চলমান উন্নয়নকে সুরক্ষা দিতে গেলে এবং চলামানের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে গেলে এখনই সুস্পষ্ট অঙ্গিকারের মাধ্যমে জনগণকে বোঝাতে হবে এবং সকল দল ও মতের সংস্কার সাধন করতে হবে। তাহলেই জনকল্যাণ এবং নিশ্চয়তা ও নিরাপত্তা এবং চলমান উন্নয়নের গতিময়তা অব্যাহত থাকবে। ব্যক্তি ও দলের এবং ক্ষমতার উদ্ধে হলো দেশ। তাই দেশকে নিয়ে ভাবুন এবং দেশের কল্যাণে নিজেদেরকে নিয়োজিত করুন। আন্দোলন, হরতাল এবং বিশৃঙ্খলা এমনকি ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকুন। চলমান উন্নয়নে আঘাত না দিয়ে বরং উন্নয়নকে এগিয়ে নিয়ে, শান্তি, শৃঙ্খলা, নিশ্চয়তা-নিরাপত্তা বিধানে কাজ করুন। জনগণ আপনাকে সুযোগ দেবেই। পৃথিবীর কোন ষঢ়যন্ত্রই আপনাকে জনগণের কাছ থেকে বিতাড়িত করতে পারবে না। তবে আপনার ইচ্ছা ও পরিকল্পনায় আর কিছু হবে না। যতক্ষণ না আপনি জনগণের কল্যাণের কথা ভাবছেন এবং সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিয়ে না এগুচ্ছেন। সৃষ্টিকর্তা আপনাকে সুযোগ দিবে তখনই যখন আপনি জনগণের সঙ্গে জনগণের প্রয়োজনে কর্মসূচী ও কার্যক্রম হাতে নিয়ে এগুচ্ছেন। সংস্কার বিষয়ে ভাবুন এবং সেই সংস্কার নিয়ে জনতার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে যান তাহলেই আগামীর কল্যাণ ও নিজের ক্ষমতা বা সেবা করার দায়িত্ব বুঝে নিতে পারবেন। বর্তমানে জনগণ তাদের চাহিদার যুগানে ব্যস্ত এবং নির্বাচন ও ভোট যুদ্ধে অনাগ্রহী। আর এই অবস্থা চলতে থাকলে আগামী দিনে প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, এমপি ও কর্মকর্তা এবং কর্মচারী কোন খোঁজ থাকবে না বরং সাধারণ মানুষ শুধু নিজের জীবন সংগ্রামে লিপ্ত থেকে দিনগুজার করবে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এই নজির রয়েছে। শান্তিপ্রিয় মানুষ কর্ম সম্পাদন করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে যাচ্ছে। কোন রাজনৈতিক নেতা বা সরকার অথবা রাষ্ট্রীয় কর্তাদের চেনেনওনা এবং চিনতে ও জানতে চানওনা। বরং নিরুত্তাপ জীবন যাপন করে শান্তিপূর্ণ দিনগুজার করে যাচ্ছে। আমাদের সমাজে ও দেশে এর লক্ষণ কিছু পরিলক্ষিত হচ্ছে হয়ত অচিরেই এর প্রভাব এবং দৃশ্যমানতা দেখা যাবে। যদি সরকার এবং জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলো আরো পরিচ্ছন্ন এবং সংস্কারের মাধ্যমে জনসম্পৃক্ততায় আরো অগ্রগামী হতে পারে তাহলে পূর্বের হারানো ঐতিহ্য ফিরে পাওয়া যাবে এবং দেশ ও জাতি সম্বৃদ্ধি লাভ করবে। আসুন আমরা আমাদের দেশ ও জাতীকে এবং রাষ্ট্রের সকলকে দল-মত নির্বিশেষে ভালবাসি এবং সেই অনুযায়ী কাজ করে যায় তাহলেই ক্ষমতার অন্তরালের সকল নেতিবাচকতা দূর হবে এবং দেশ ফিরে পাবে শান্তি ও নিশ্চয়তা এবং নিরাপত্তা ও জনবান্ধব সর্বজন গ্রহনযোগ্য সরকার। এই প্রত্যাশা রেখেই সালাম জানিয়ে বিদায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published.