বাংলাদেশের রাজনীতি ও নির্বাচন নিয়ে দিল্লির অভিপ্রায়

প্রশান্তি ডেক্স ॥ বাংলাদেশে আসন্ন নির্বাচনের পটভূমিতে যে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে, তা নিয়ে প্রতিবেশী হিসেবে ভারত কোনও মন্তব্য করতে চায় না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিলো। তবে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক স্থিতিশীলতার আদর্শের প্রতি ভারতের সমর্থন যে অব্যাহত থাকবে, সেটাও পরিষ্কার করে দেওয়া হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) সন্ধ্যায় দিল্লিতে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী এই মন্তব্য করেছেন।

বাংলাদেশে বিরোধী দলের ওপর যে ধরনের ‘ক্র্যাকডাউন’ চলছে তাতে ভারতের প্রতিক্রিয়া কী, দিল্লির একজন সাংবাদিক এ প্রশ্ন করলে মুখপাত্র প্রথমেই জানিয়ে দেন, ওই সাংবাদিকের শব্দচয়নের সঙ্গে তিনি মোটেই একমত নন। তারপর বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে তিনি ভারতের অবস্থান বিশদে তুলে ধরেন।

বাংলাদেশ নিয়ে ‘দ্য হিন্দু’ পত্রিকার তরফে করা ওই প্রশ্নটি ছিল এদিনের (৯ নভেম্বর) ব্রিফিংয়ে করা শেষ প্রশ্ন। সেই প্রশ্ন ও তার উত্তর নিচে হুবহু তুলে ধরা হলো:

কল্লোল ভট্টাচার্য (দ্য হিন্দু): ‘বাংলাদেশে গত ২৮ অক্টোবর বিরোধীদের মহাসমাবেশের পর থেকেই তাদের বিরুদ্ধে ক্র্যাকডাউন শুরু হয়েছে। বৃহত্তম বিরোধী দলের মহাসচিবসহ বেশ কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় বিরোধী নেতাকে জেলেও পাঠানো হয়েছে। বস্তুত বিরোধী দলের স্ট্যান্ডিং কমিটির এক সদস্য তার দিল্লি সফরকালে আমাদের এমনও বলেছেন যে ভারত এখন পর্যন্ত এমন একটাও বিবৃতি দেয়নি, যাতে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের পথ প্রশস্ত হয়। ফলে স্বভাবতই তারা হতাশ। এই পটভূমিতে আপনার কাছে জানতে চাইবো এই যে বাংলাদেশে সরকারবিরোধী নেতাদের জেলে ভরছে, এ ব্যাপারে ভারত সরকারের অবস্থান কী?’

অরিন্দম বাগচী (ভারত সরকারের মুখপাত্র): ‘আমার উত্তর দেওয়ার আগেই এটা আমি পরিষ্কার করে দিতে চাই যে পরিস্থিতি বর্ণনা করতে আপনি যে শব্দগুলো প্রয়োগ করলেন (ক্যারেক্টারাইজেশন), তার কোনোটাই আমার ভাষা নয়, ওগুলো আপনার! যেমন ধরুন, ক্র্যাকডাউন বা বিরোধী নেতাদের জেলে পোরা…। এগুলো আপনার ব্যাখ্যা ও শব্দচয়ন, দয়া করে আমার মুখে ওগুলো বসাবেন না।’

‘এখন বলি, আমরা কখনোই তৃতীয় কোনও দেশের নিজস্ব নীতি নিয়ে মন্তব্য করতে পছন্দ করি না। বাংলাদেশের নির্বাচনও তাদের একটি অভ্যন্তরীণ ঘরোয়া বিষয়। বাংলাদেশের মানুষ নিজেরাই তাদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবেন, এখানে আমাদের কিছু বলার থাকতে পারে না।’

‘(তবে) বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও সহযোগী (পার্টনার) হিসেবে বলবো, আমরা সে দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সম্মান করি ও মর্যাদা দেই। একটি স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ ও প্রগতিশীল রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের যে ভিশন (দৃষ্টিকল্প), তার প্রতিও আমাদের সমর্থন অব্যাহত থাকবে।’

‘আপনি যা যা বলেছেন, তার উত্তরে এটাই হবে আমার জবাব।’ বাংলাদেশে বর্তমানে ক্ষমতাসীন নেতৃত্ব বিগত দেড় দশক ধরে সে দেশে গণতান্ত্রিক পরম্পরা ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার যে ধারা বজায় রেখে চলেছে-ভারত সরকারের এই মন্তব্যকে তার প্রতি অটুট সমর্থনের বহিঃপ্রকাশ বলেই ব্যাখ্যা করছেন দিল্লির পর্যবেক্ষকরা।   

Leave a Reply

Your email address will not be published.