‘জোম্বি ড্রাগ’র অনুপ্রবেশ ঠেকাতে দেশে সতর্কতা জারি

প্রশান্তি ডেক্স ॥ গত কয়েক বছরে ধরে নতুন নতুন মাদকের দেখা মিলেছে দেশে।  ক্রিস্টাল মেথ বা আইস (মিথাইল অ্যামফিটামিন), এলএসডি (লাইসার্জিক অ্যাসিড ডাইথ্যালামাইড), ডিওবি (ডাইমেথক্সিব্রোমো অ্যামফিটামিন), খাট (ক্যাথিনোন ও ক্যাথিন), ম্যাজিক মাশরুম ও ‘ক্র্যাটম প্ল্যান্টের’ মতো মাদকের অনুপ্রবেশ ঘটেছে নানা পথে। এসব মাদকের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ছিল শক্ত অবস্থানে। দফায় দফায় নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে এসব মাদকের চালানসহ অনেকে গ্রেফতারও হয়েছেন। এর মধ্যেই গত মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) ভয়ংকর নতুন মাদক ‘জোম্বি ড্রাগ’ নিয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর দেশে সতর্কবার্তা জারি করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে ছড়িয়ে পড়েছে ‘জম্বি ড্রাগ’। জানা গেছে, প্রতি পাঁচ মিনিটে একজনের জীবন সংশয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এই ড্রাগ সেবন। আর এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মার্কিন চিকিৎসকদের একাংশ। ‘জোম্বি ড্রাগ’-এর বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নিউ ইয়র্ক প্রশাসনের কাছে জানানো হয়েছে আবেদন।

মাদকদ্রব্য অধিদফতর জানিয়েছে, সিনথেটিক মাদক ‘জোম্বি ড্রাগ’ সম্পর্কে তাদের কর্মকর্তারা পরিচিত নন। ফলে যাতে কোনোভাবে এ মাদক নিয়ে দেশে প্রবেশ না করতে পারে সেজন্য সতর্কতা জারি করা হয়েছে। অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানান, দেশের বিমানবন্দরে যাতে ‘জোম্বি ড্রাগ’ বিষয়ে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়, সেজন্যই ওই সতর্কতা জারি করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রে আড়াই লাখের বেশি বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত অভিবাসী রয়েছেন। দেশে তাদের যাতায়াত ছাড়াও অর্থনৈতিক যোগাযোগ আছে। অনেকেই সেখানে পড়াশোনা করতে যায়। অনেক গ্রিন কার্ড হোল্ডার, নিয়মিত যাতায়াত করেন। তাই এটি সহজেই বাংলাদেশে প্রবেশ করার শঙ্কা রয়েছে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর গোয়েন্দা শাখা থেকে জারি করা সতর্কবার্তায় বলা হয়, মাদকটি মানবদেহে মারাত্মক ইনফেকশন, দৃষ্টিভ্রম এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাতে পারে। এটি অল্প পরিমাণে সেবন করলে সেবনকারী বাস্তব ভুলে কল্পনার জগতে বিচরণ করে। সামান্য বেশি সেবনে মৃত্যু নিশ্চিত হয়ে পড়ে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাংলাদেশে ইয়াবা, ফেনসিডিল, গাঁজা, হেরোইন ও ইনজেকশনাল ড্রাগের আধিক্য বেশি। এগুলোর পাশাপাশি ইদানীং ট্যাপেন্ডাডল নামে আরেকটি মাদকের প্রাদুর্ভাব ঘটেছে, যেটি ইয়াবার বিকল্প হিসেবে মাদকবেসীরা সেবন করে।

এ ছয় ধরনের মাদক মূলত স্থল সীমান্তের মাধ্যমে দেশে প্রবেশ করে। সে কারণে সহজেই দেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। আর এলএসডি, ডিওবি জাতীয় কিছু মাদক আছে যেগুলো আকাশপথে দেশে আসে। বিমানবন্দরকেন্দ্রিক স্ক্যানিংসহ নানা সতর্কতার কারণে এসব মাদক এখনও দেশে ততটা সহজলভ্য হয়ে উঠতে পারেনি বলে দাবি ডিএনসির কর্মকর্তাদের।

এ বিষয়টি প্রথম সংস্থাটির নজরে আনেন রাজশাহী অঞ্চলের উপ-পরিচালক (গোয়েন্দা) মোহা. জিল্লুর রহমান। তিনি গত ৩০ আগস্ট এ বিষয়ে ১১ পাতার একটি প্রতিবেদন পাঠান ঢাকায় মাদকদ্রব্য অধিদফতরের প্রধান কার্যালয়ে।

সংস্থাটির উপ-পরিচালক জিল্লুর রহমান বলেন, ‘মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর নোডাল এজেন্সি হিসেবে দেশে এবং বিদেশে সমসাময়িক যেসব মাদকের প্রাদুর্ভাব ঘটছে, সেদিকে নজর রাখে। সাম্প্রতিক সময়ে আমেরিকায় এ মাদকটির ব্যাপক প্রাদুর্ভাব ঘটায় পূর্ব সর্তকতা অবলম্বন করতে বিষয়টি অধিদফতরের নজরে আনা হয়।’

এ প্রসঙ্গে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের পরিচালক (অপারেশন্স ও গোয়েন্দা) তানভীর মমতাজ আমাদের প্রতিনিধিকে বলেন, “সিনথেটিক মাদক ‘জোম্বি ড্রাগ’ সম্পর্কে আমাদের কর্মকর্তারা পরিচিত নয়। যাতে কোনোভাবে এ মাদক নিয়ে দেশে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্যই সবাইকে সতর্ক করা হয়েছে। বিমানবন্দরে যারা নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেন তারা যেন এ বিষয়ে সতর্ক থাকেন।”

তিনি আরও বলেন, ‘ভয়ানক এ মাদক মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যার পাশাপাশি মৃত্যুও ডেকে আনতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রে এর ব্যবহার ভয়াবহ মাত্রায় বেড়ে গেছে। সে কারণে বাংলাদেশেও সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। যদিও এ ধরনের মাদক এখনও বাংলাদেশে সেভাবে ছড়ায়নি। কিন্তু আমাদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের নিয়মিত আকাশপথে যোগাযোগ আছে। অনেকেই সেখানে পড়াশোনা করতে যায়, গ্রিন কার্ড হোল্ডার আছেন অনেকে, তারা নিয়মিত যাতায়াত করেন। ফলে এটি এখানেও ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি আছে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published.