ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত গার্মেন্টস মালিকরা নজরদারিতে

প্রশান্তি ডেক্স ষড়যন্ত্রেও সঙ্গে যুক্ত বিএনপি ও জামায়াত মতাদর্শের গার্মেন্টস মালিকদের নজরদারিতে রেখছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, মার্কিন শ্রমনীতি ঘোষণার কারণে বিএনপি-জামায়াত মতাদর্শের গার্মেন্টস ব্যবসায়ীরা নিজেরাই কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে বলে শঙ্কা রয়েছে, যাতে গার্মেন্টস সেক্টরে পশ্চিমা দেশ থেকে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে এই ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতেই নজরদারি করা হচ্ছে। সম্প্রতি পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) থেকে একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদনেও বিএনপি-জামায়াত মতাদর্শের গার্মেন্টস মালিকদের নজরদারি করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মাহবুবুর রহমান রিপন বলেন, ‘কেউ যাতে গার্মেন্টস সেক্টরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে, সেজন্য আমরা নিয়মিত নজরদারি করছি। বিশেষ করে বিএনপি-জামায়াতের মালিকানাধীন ও মতাদর্শের গার্মেন্টস কারখানাগুলো নজরদারিতে রয়েছে। কোনোভাবেই গার্মেন্টস খাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে দেওয়া হবে না।’

গংশ্লিষ্টরা জানান, সম্প্রতি বেতন বাড়ানোর দাবিতে গার্মেন্টস শ্রমিকরা আন্দোলন করে। তখন গাজীপুর ও ঢাকার মিরপুরে এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। শ্রমিকদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে একাধিক শ্রমিক নিহত হন। বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা ইন্ধন দিয়ে আন্দোলনকে আরও বেগবান করার পাঁয়তারা করেছিলেন। এমনকি বিএনপির মহাসচিব গার্মেন্টস শ্রমিকদের আন্দোলনে সমর্থন জানিয়েছিলেন। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কৌশলী হয়ে আন্দোলন নিয়ন্ত্রণে আনে। সরকারের পক্ষ থেকেও দ্রুত শ্রমিকদের সর্বনিম্ন মজুরি নির্ধারণ করে দেওয়া হয়।

সম্প্রতি পুলিশের বিশেষ শাখার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে বিএনপি রাজনীতির মাঠে সুবিধা করতে না পেরে দেশের বিভিন্ন পেশাজীবী ও শ্রমিক সংগঠনকে টার্গেট করে, শ্রমিকদের উসকে দিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করছে। তারা ছাত্র-শ্রমিক ও পেশাজীবীদের সঙ্গে জোট গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে। এরইমধ্যে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের নেতৃত্বে ১৫টি শ্রমিক সংগঠনের যৌথ উদ্যোগে শ্রমিক-কর্মচারী কনভেনশন করেছে। গার্মেন্টস শ্রমিকদের কৌশলে সরকারবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত করে গার্মেন্ট খাতে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির অপতৎপরতা চালাচ্ছে।

গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর কাছ থেকে আর্থিক সুবিধাগ্রহণকারী কিছু শ্রমিক নেতা, বিশেষত বাম ঘরানার কিছু শ্রমিক নেতা ও সংগঠন আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রকারীদের পক্ষে কাজ করছেন। তারা কৌশলে সরকারবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত হয়ে চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ও সরকার উৎখাতের অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ তাদের মিত্র দেশগুলো শ্রমিক আন্দোলনের নামে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে ষড়যন্ত্রমূলক বিভিন্ন বিধিনিষেধ ও শর্ত আরোপ করার মাধ্যমে রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাতে পারে। যাতে গার্মেন্টস ব্যবসায়ীরা সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। বিএনপি-জামায়াত রাজনৈতিক মতাদর্শের গার্মেন্টস ব্যবসায়ী ও রুগ্ন গার্মেন্ট শিল্পের মালিকরা শ্রমিক আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারেন।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা জানান, গার্মেন্ট খাতকে সুরক্ষা দিতে তারা প্রতিনিয়ত নজরদারি করছেন। বিএনপি-জামায়াত জোট তাদের চলমান আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে এই খাতে বিশৃঙ্খলা তৈরিতে মনোনিবেশ করেছে বলে তাদের কাছে তথ্য রয়েছে। বিএনপি-জামায়াত জোট চাইছে যেকোনোভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টি আকর্ষণ করিয়ে গার্মেন্টস খাতে যেকোনও ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা।

এদিকে সম্প্রতি বাংলাদেশের তৈরি পোশাক ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ফারুক হাসান চট্টগ্রামে এক মতবিনিময় সভায় জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে বিজিএমইএ’র এক সদস্য ব্যবসায়ীকে শর্ত আরোপ করে ঋণপত্র খোলার কথা বলেছে। ঋণপত্রের সাধারণ শর্তে বলা হয়েছে বাংলাদেশ কোনও নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়লে তারা পণ্য নেবে না। যদি পণ্য জাহাজীকরণের পর নিষেধাজ্ঞা আরোপের কোনও ঘটনা ঘটে, তাহলে অর্থ ফেরতও দেবে না প্রতিষ্ঠানটি।

গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় চার হাজার ১০৯টি গার্মেন্টস কারখানা রয়েছে। এতে প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিক কাজ করেন। এই খাতে উৎপাদিত পোশাক বিশ্বের প্রায় ১৬৭টি দেশে রফতানি হয়। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৫ হাজার ৫৫৬ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে। এর মধ্যে পোশাক রফতানি হয়েছে প্রায় ৪ হাজার ৬৯৯ কোটি ডলার মূল্যমানের, যা রফতানি আয়ের শতকরা ৮৪ দশমিক ৫৭ শতাংশ। ফলে এ খাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে বিধিনিষেধ আরোপ করানো গেলে সরকার অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিরোধীরা মাঠের আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে দেশকে অর্থনৈতিকভাবে পংগু করার চেষ্টা করছে।

ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, গার্মেন্টস মালিকদের মধ্যে কারা কোন মতাদর্শের এবং কোন ধারার রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত, তার তালিকা করা হয়েছে। এই তালিকা ধরে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ নজরদারির কাজ করছে। এছাড়া ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের পাশাপাশি সরকারের প্রভাবশালী একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও গার্মেন্টস খাতে যেন কোনও ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি কেউ করতে না পারে, সেজন্য কাজ করছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.