১২বছর পরে শর্টকোডকে জাতীয় সম্পদ বিবেচনা বিটিআরসির

প্রশান্তি ডেক্স ॥ ২০২০ সালের আগে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসিতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়ে চাইলেই শর্টকোড (৩, ৪ বা ৫ সংখ্যার নম্বর) বরাদ্দ পাওয়া যেতো। শর্টকোড বরাদ্দকরণ নীতিমালা-২০১০ থাকলেও এ বিষয়ে কোনও দিকনির্দেশনা ছিল না। রাষ্ট্রীয় সম্পদ বিবেচনা করে ২০২০ সাল থেকে শর্টকোড বরাদ্দে কঠোর হয়েছে বিটিআরসি। এখন শুধু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিলেই হয় না – প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন, নানা ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হয়।

জানা যায়, ২০০৮ সাল থেকে দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে শর্টকোড নাম্বার বরাদ্দ প্রদান করা হচ্ছে। তবে ২০২০ সালের জুলাই মাস থেকে শর্টকোড নাম্বার বরাদ্দ প্রদানের ক্ষেত্রে শর্টকোড বরাদ্দকরণ নীতিমালা-২০১০ অনুসরণ করা হতো। পরবর্তী সময়ে নীতিমালা সংশোধন করে তা শর্টকোড বরাদ্দকরণ নীতিমালা-২০২০ প্রণয়ন করা হয় এই রাষ্ট্রীয় সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিতকরণের জন্য।

শুরুতে ৩, পরবর্তী সময়ে এসে ৪ সংখ্যার শর্টকোড নম্বর বরাদ্দ দেওয়া হতো। বর্তমানে ৫ সংখ্যার নাম্বার বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রযুক্তির উৎকর্ষের সঙ্গে সঙ্গে নম্বরও বদলে গেছে। বর্তমানে সরকারি প্রতিষ্ঠান, জরুরি সেবা, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, টেলিকম সেবা গ্রহণ, ব্যাংক-বিমা, এয়ারলাইন্স, হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং বিশেষ করে কলসেন্টারে এই শর্টকোড বিপুল জনপ্রিয়। কোনও প্রতিষ্ঠানের নম্বর জানা না থাকলে কোনও অসুবিধা নেই। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা সেবার নাম লিখে গুগলে সার্চ দিলেই শর্টকোড নাম্বার পাওয়া যায়। শর্টকোড নাম্বারের সুবিধা হলো মনে রাখা সহজ এবং অনেক নম্বরে বারবার ডায়াল করতে হয় না। একটি নাম্বারে ডায়াল করে পাওয়া যায় বা কিছু সময় অপেক্ষা করতে হয়।

২০২০ সালের চিত্র : মোট বরাদ্দ হওয়া শর্টকোড ৬০০টি। সেসময় মেয়াদোত্তীর্ণ শর্টকোড ৯৯টি। আর নন-অপারেশনাল শর্টকোড ১৬৫টি। তবে নথি বলছে, শর্টকোড বরাদ্দকরণ নীতিমালা ২০১০-এ নির্ধারিত সময়ে শর্টকোডের বার্ষিক নবায়ন ফি পরিশোধ বা এ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কোনও দিকনির্দেশনা ছিল না। ফলে বরাদ্দ পাওয়া অনেক প্রতিষ্ঠান বার্ষিক নবায়ন ফি প্রদান না করেই শর্টকোড বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করতো বা মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার অনেক পরে নবায়ন ফি প্রদান করতো। ফলে বিটিআরসি মনে করে, এ বিষয়ে সে সময়ে কোনও শৃঙ্খলা ছিল না। এসব বিষয়ে শৃঙ্খলা আনার জন্য ২০২০ সালের ৪ জুলাই শর্টকোড বরাদ্দকরণ নীতিমালা-২০২০ জারি করা হয়। এই নীতিমালার ফলে শর্টকোড বরাদ্দে শৃঙ্খলা আনার জন্য বিভিন্ন ধরনের শর্ত সংযোজন করা হয়।

২০২৩ সালের চিত্র : মোট বরাদ্দ পাওয়া শর্টকোড ৫০২টি। মেয়াদোত্তীর্ণ শর্টকোড ১৩টি। আর নন-অপারেশনাল শর্টকোড ১৪টি। মেয়াদোত্তীর্ণ ও নন-অপারেশনাল শর্টকোডের বরাদ্দ বাতিল হয়েছে এখন পর্যন্ত ২৩৮টি।

শর্টকোড বরাদ্দকরণ নীতিমালা-২০২০ সংশোধন : সম্প্রতি শর্টকোড বরাদ্দকরণ নীতিমালা-২০২০ আরও গ্রাহকবান্ধব করা হয়েছে। শর্টকোড বরাদ্দকরণ নীতিমালা ২০২০-এ বিলম্ব ফি প্রদানের বিষয়টি সহজ করা হয়েছে। সেই মতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ফি প্রদানের ব্যর্থ প্রতিষ্ঠানগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার এক বছর পর্যন্ত নবায়ন ফি’র ১৫ শতাংশ বিলম্ব ফি হিসেবে প্রদান করে শর্টকোড নবায়ন করতে পারবে। আগে এই নিয়ম ছিল না। নতুন এই নিয়মের ফলে শর্টকোড খাতে শৃঙ্খলা ফিরবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশাবাদী। তবে একাধিক বছরের বকেয়া থাকলে প্রতি বছরের জন্য নবায়ন ফি’র ১৫ শতাংশ অর্থ বিলম্ব ফি হিসেবে প্রদান করতে হবে। এতে কোনও শর্টকোড মেয়াদোত্তীর্ণ হলেও বিলম্ব ফি জমা দিয়ে নিয়মিত করা যাবে। ফলে মেয়াদোত্তীর্ণ ও নন-অপারেশনাল শর্টকোডের সংখ্যাও কমবে।

শর্টকোড বেশি জনপ্রিয় কলসেন্টার শিল্পে। দেশের কলসেন্টার শিল্পের সংগঠন বাক্কোর মহাসচিব তৌহিদ হোসেন বলেন, শুরুর দিকে শর্টকোড বরাদ্দ পাওয়া সহজ ছিল। এখন প্রক্রিয়াটা বেশ কঠিন। তারপরও প্রতিষ্ঠানগুলো কলসেন্টারের মাধ্যমে শর্টকোড ব্যবহার করতে চায়। এর মূল কারণ হলো, শর্টকোড মনে রাখা সহজ। সেবা গ্রহীতা সহজে মনে রাখতে পারেন, গুগলে সার্চ দিয়ে খুঁজে পেতেও সহজ হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published.