দুই পুলিশকে কুপিয়ে জখম, ৩ডাকাত গ্রেফতার

প্রশান্তি ডেক্স ॥ গাজীপুরের শ্রীপুরে টহলরত দুই পুলিশ সদস্যকে কুপিয়ে জখম করার ঘটনায় আন্তঃজেলা ডাকাত দলের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব। গত বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) রাতে র‍্যাব-১ ও র‍্যাব-১০ যৌথ অভিযান চালিয়ে রাজধানীর কেরানীগঞ্জ থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করে।

গত শুক্রবার (৮ মার্চ) দুপুরে র‍্যাব-১ এর মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। গ্রেফতাররা হলেন- পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী এলাকার খলিল সরদারের ছেলে ডাকাত দলের প্রধান ইসমাইল সরদার লিটন (৩৮), সহযোগী একই এলাকার মৃত আবুল হোসেনের ছেলে হানিফ মাস্টার (৪০) ও নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার মুসলিম মিয়ার ছেলে কামরুল মিয়া (২০)। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা বিভিন্ন স্থানে ডাকাতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ও পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে।

র‍্যাব কর্মকর্তা কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, গ্রেফতার ডাকাত রুবেলের দেওয়া তথ্যে র‍্যাব কেরানীগঞ্জ এলাকায় সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করে দলের প্রধান ইসমাইল ও সহযোগী হানিফকে গ্রেফতার করে। তারা স্বীকার করে ৬/৭ জন ডাকাত ৩ মার্চ (রবিবার) দুপুরে রাজধানীর কেরানীগঞ্জ থেকে পিকআপযোগে গাজীপুরের শ্রীপুর এলাকায় ডাকাতির উদ্দেশে আসে। তারা শ্রীপুরের মাওনা-কালিয়াকৈর সড়কে ডাকাতির উদ্দেশে সন্ধ্যা থেকে সুবিধাজনক স্থান চিহ্নিত করতে থাকে। একইদিন মধ্যরাতে সিংগারদিঘীর (হাসিখালী ব্রিজ) এলাকায় ওই সড়কের গাছ ফেলে পথচারীদের দেশীয় অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে গণ ডাকাতি করতে থাকে। খবর পেয়ে শ্রীপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে ডাকাত দলের সদস্যরা টের পেয়ে তাদের ওপর ধারালো অস্ত্র দিয়ে হামলা করে।

ডাকাতের হামলায় দুই কনস্টেবল রুহুল আমিন ও সেলিম মিয়া গুরুতর আহত হন। খবর পেয়ে শ্রীপুর থানা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে তারা পালিয়ে যান। এ সময় ডাকাত সদস্য রুবেল গাড়ির সঙ্গে পায়ে আঘাত পেয়ে আহত হলে তাকে আটক করা হয়। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদে ডাকাতরা জানান, তারা সংঘবদ্ধ আন্তঃজেলা ডাকাত চক্র। এই দলে ৮/১০ জন সদস্য রয়েছে। ইসমাইলের নেতৃত্বে তারা রাজধানী ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও ফরিদপুরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বাসা বাড়ি ও দোকান ডাকাতির কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। এ ডাকাত দল দীর্ঘদিন ধরে নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীতে বিভিন্ন বালুর বলগেটে ডাকাতি করতো বলে জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করে। গ্রেফতাররা বিভিন্ন সময় কারাগারে থাকা অবস্থায় আন্তঃজেলা ডাকাতদের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে পরিচিত হয়ে ডাকাতির বিষয়ে বিভিন্ন কৌশল শিখে নিতেন। পরে জামিনে বেরিয়ে কারাগারে থাকা ডাকাতদের কৌশল ব্যবহার করে ডাকাতি করতেন।

র‍্যাব জানায়, গ্রেফতার ইসমাইল ১০/১২ বছর ধরে একটি কেমিক্যাল কোম্পানির মালামাল রাজধানীর মিটফোর্ড মার্কেটে সরবরাহ করতেন। ২০১৮ সালে কেরানীগঞ্জ এলাকার এক ডাকাতের সঙ্গে পরিচয়ের মাধ্যমে এই অপরাধে জড়িয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে ওই মার্কেটে কেমিক্যাল সরবরাহের পাশাপাশি কেরানীগঞ্জসহ আশপাশের এলাকায় ডাকাতি করতেন। ডাকাতিতে সুবিধার জন্য ছদ্মবেশে ইজিবাইক চালানো শুরু করেন। তার বিরুদ্ধে ঢাকার দোহার, কেরানীগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জ এলাকায় ডাকাতির ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানায় ডাকাতির চারটি মামলা রয়েছে ওইসব মামলায় এক বছরের বেশি কারাভোগ করেছেন বলে স্বীকার করেন। তার নেতৃত্বে ২০২৩ সালে ফরিদপুরে বেশ কয়েকটি সোনার দোকানে ডাকাতি হয়। ডাকাতির মামলায় সাত মাস কারাভোগের পর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে জামিনে বের হয়ে পুনরায় একই কাজ করতে থাকেন।

গ্রেফতার হানিফ ইসমাইলের সহযোগী। তিনি ২০১১ সালে ডাকাতির সঙ্গে জড়িত হন। ডাকাতির বিভিন্ন স্থান নির্ধারণ, কৌশল ও পরিকল্পনা করতেন। পরিকল্পনায় অত্যন্ত বিচক্ষণ থাকায় আন্তঃজেলা ডাকাত চক্রের কাছে তার মাস্টার উপাধি ছিল এবং সবাই তাকে মাস্টার বলে জানতেন। ২০১৩ সালে হত্যা মামলায় দুই বছরের বেশি কারাভোগ করেন। এ ছাড়াও তার বিরুদ্ধে একাধিক ডাকাতির মামলা রয়েছে এবং সব মামলায় কারাভোগ করেছেন।

গ্রেফতার কামরুল ইসমাইলের সঙ্গে ৩/৪ বছর আগে পূর্বে রাজধানীর জিনজিরা এলাকায় ভাড়া থাকার সময় পরিচয় হয়। পরে ডাকাতি কার্যক্রম আড়াল করতে তিনি দিনে রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। গাজীপুর এলাকায় ডাকাতির জন্য সুবিধাজনক বিভিন্ন স্থান সম্পর্কে সর্দার ইসমাইল ও হানিফ মাস্টারকে আগাম তথ্য দিতেন। তিনি গাজীপুরে ডাকাতির আগে পরিকল্পনার জন্য বিভিন্ন সময় ইসমাইল ও হানিফের কাছে আসতেন। পরিকল্পনা শেষে গাজীপুরে ফিরে ডাকাতিতে অংশগ্রহণ করতেন।

শ্রীপুর থানার ওসি শাহ জামান জানান, শুক্রবার বিকালে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত তাদেরকে থানায় সোপর্দ করেনি র‍্যাব। থানায় সোপর্দের পর আইনি প্রক্রিয়া শেষে তাদেরকে আদালতে পাঠানো হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.