স্বস্তীর নিশ্বাস ফেলা বড়ই কঠিন

মানব রচিত সমাজ ব্যবস্থায় এখন স্বস্তীর নিশ্বাস ফেলা বড়ই কঠিন বলে প্রতিয়মান হয়েছে এমনকি প্রমানিতও হয়েছে। যুগ যুগ ধরে এই অস্বস্তিমূলক বাক্যটি সত্যে রূপলাভ করে অগ্রগামীতায় এগিয়ে রয়েছে। তবে স্বস্তীর নিশ্বাস ফেলাও যায় এবং কতিপয় ব্যক্তিমহল এই স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে জীবন সংগ্রামে অগ্রসর হচ্ছে। এই অগ্রসর হওয়াদের আবার স্তরবিন্যাস রয়েছে। কিন্তু স্তর বিন্যাসের চুড়ান্ত ও শিষ্য পর্যায়ে রয়েছে একমাত্র সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত স্বস্তী ও সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত দান গ্রহনকারী ব্যক্তিরা যারা সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে সর্বময় ও সার্বজনীন জীবন যাপন করে যাচ্ছেন।

বর্তমানে পৃথিবীতে স্বস্তী উধাও। কোথাও নেই স্বস্তী নামক শব্দের ব্যবহার ও ফল। কিন্তু সবাই স্বস্তির আশায় দৌঁড়ায়ে ঘুড়েবালিতে পরিণত হয়ে যাচ্ছে অহরহ এবং দিশেহারা জীবন যাপন করে যাচ্ছে উদভাস্তের মত। পরিবারে নেই স্বস্তী, স্কুল – কলেজ ও মাদ্রাসা মক্তবে নেই স্বস্তী, বিশ্ববিদ্যালয়, বিচারালয়, কর্মক্ষেত্রে, ব্যবসায়, বাজার, চাষ-বাসে এবং জীবনচক্রে কোথায় নেই স্বস্তী। স্বাস্থ্য ও সুস্থ্যতায় নেই স্বস্তী; কোন কোন ক্ষেত্রে ঈমান ও আমলেও নেই স্বস্তী। তাই স্বস্তী এখন গেল কোথায়? প্রশ্ন আমার আপনার সকলের। আমরা কি স্বস্তীকে খুজে বের করতে পারি। হ্যা পারি; যদি তায়ই হয় তাহলে আসুন সকলে স্বস্তীকে খুজি। সরকার, মন্ত্রী, এমপিসহ সকল উদ্ধতন কর্মকর্তাদের জীবনেও স্বস্তীর অভাব এবং রাজনীতিতে স্বস্তী এখন বিলীন। ধন ও দৌলতে সমৃদ্ধিতেও স্বস্তী উধাও। তাই কিসের জন্য এবং কিসের আসায় দৌঁড়াচ্ছেন একটু ভেবে দেখুন এবং চিন্তা করুন আর সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে যোগসূত্র স্থাপনে আগ্রহী হয়ে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখুন।

আমার মতে সৃষ্টিকর্তার দেয়া নিয়ামত হলো স্বস্তী। আর এই স্বস্তী বিনামূল্যের দান। সৃষ্টিকর্তাকে নিয়ে ভাবলে এবং তাঁর সঙ্গে বসবাস করা শুরু করলেই স্বস্তীকে খুজে পাওয়া যায় এবং ভোগ করা যায়। অন্যথায় স্বস্তীকে পাওয়া ও ভোগ করা সম্ভব নয়। জীবনের সকল ক্ষেত্রের স্থায়ী ও নিরাপদ নিশ্চয়তায় স্বস্তী ভোগ করার একমাত্র পথই হলো খোদায়ী জীবন এবং খোদার প্রতিনিধিত্ব করা। যার যার অবস্থান থেকে খোদায়ী মূল্যবোধের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা। স্বস্তী ভোগ করা এবং বিলিয়ে দেয়ার জন্য আপনি প্রস্তুত; যদি তাই হয় তাহলে এখন থেকে স্বস্তীর সঙ্গে বসবাস শুরু করুন।

খোদায়ী মানুষজন বিভিন্নভাবে স্বস্তী ভোগ করে যাচ্ছেন এবং সময়মত খোদা তাদেরকে স্বস্তীর নিয়ামত উপহার দিয়ে প্রমান ও প্রকাশ করে যাচ্ছেন তার যত্ন ও খেয়াল বা যোগান দেয়ার বিষয়টি। একটি ছোট্ট উদাহরণ দিয়ে শেষ করছি আজকের সংক্ষিপ্ত লিখা। কারণ ব্যক্তিটি আমি নিজে- আমি শতভাগ সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাসী এবং জীবনের সর্বময় সৃষ্টির কল্যাণে নিবেদিত হয়ে সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে যুক্ত থেকে তাঁর হুকুম-আহকাম পালন করে যাচ্ছি। তাই জীবনে সর্বময় স্বস্তী আস্বাধন করে উপভোগ করছি তাঁর দেয়া বিনামূল্যের দান এই নিয়ামত। জীবন সন্ধিক্ষণে এবং কঠিন সময়ে কখনো প্রতিবন্ধকতার স্বীকার হয়নি বরং স্বস্তীতে, শান্তিতে, নিরাপদে ও নিশ্চিতে অগ্রসর হয়েছি। এই সাফল্য ও আনন্দ এবং নিশ্চয়তা লিখে বোঝানো সম্ভব নয়; তারপরও চেষ্টা করছি মাত্র।

গত কয়েকমাস যাবত জীবন থেমে থাকেনি তবু শরীরের বিভিন্ন জটিলতায় আমি উত্তেজিত থাকতাম। কিন্তু আমার স্ত্রী এই বিষয়টি লক্ষ্য করেছে এবং পদক্ষেপ নিয়েছে। আমি বিশ্বাস করতাম  ও করি সৃষ্টিকর্তা তার নিরুপিত সময়ে এবং আমার দ্বারা কৃত কাজ সম্পন্ন করে শান্তিতে তাঁর কাছে নিয়ে যাবেন। আমিও সেইভাবে প্রস্তুত। এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করে সকলকে বোঝাতে চেষ্টা করতাম যেন আমার অবর্তমানে পরিবার, অফিস এবং বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয় পরিজনরা সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে আরো গভীর সম্পর্কে আবদ্ধ হয়। কিন্তু আমার স্ত্রী সেই বিষয়গুলো গুরুত্ব দিয়েও আমাকে ডাক্তারের কাছে নিতে আগ্রহ প্রকাশ করে এবং আমি বলি আমার বিশ্বাস সৃষ্টিকর্তায় শতভাগ এবং আমি তোমাকেও শ্রদ্ধা ও বিশ্বাস করি কারণ দোজনেই আমার ভাল চাও। আর যদি সৃষ্টিকর্তা তোমাকে ব্যবহার করে কিছু করতে চাই তাহলে আমি তোমার কথা শুনব।

সেই মোতাবেক তার পছন্দের এক ডাক্তার এপয়েন্টমেন্ট করে আমাকে নিয়ে যায়। ঐ ডাক্তার আমারও পছন্দের এবং অল্পদিনে সম্পর্কটা হয় মধুর (ভাই ও বোনের)। সেই ডাক্তারের প্রচেষ্টা, উপদেশ এবং বিভিন্ন পদক্ষেপ আমাকে খুজে পেতে সাহায্য করে আমার শারীরিক সমস্যা। তবে আচানক বিষয় হলো আমি উচ্চ রক্তচাপ অক্তান্ত যা ২০০/১২০ এবং ডায়াবেটিকক্স ১৬-১৮, আমার বয়স ৫১। তিনি আমাকে নিয়মতান্ত্রিকভাবে সকল পরিক্ষায় করিয়ে নেন এবং পরিক্ষা বেশিরভাগ অনুত্তির্ণ হই। তবে মনের জোর ও মনোবল এবং সৃষ্টিকর্তার বিশ্বাস আমাকে ঐ পরীক্ষায় বিশ্বাস করা থেকে বিরত রাখে কিন্তু তাদের পরামর্শ শুনে অগ্রসর হয়ে উনাদের সম্মান প্রদর্শন করি। আমি যুবকদের চেয়েও বেশী দৌড়াতে পারি এবং ১০তলা পর্যন্ত সিড়ি বেয়ে উঠতে পারি এমনকি প্রতিদিন ৩০০০ ষ্টেপ দিয়ে রাস্তা প্রদক্ষিণ করি। কোন সমস্যা অনুভব করিনি তবে মাঝে মধ্যে একটু ক্লান্ত অনুভব করতাম। এটাকে স্বাভাবিক মনে করে অগ্রসর হতাম। তবে সৃষ্টিকর্তা আমাকে সাহায্য করে সকল পরিক্ষায় উত্তীর্ণ করেছেন। যেটা আমার স্বভাভে বদ্ধমূল ভাবে গেথে আছে যে, আমি হারতে চাইনা বরং সৃষ্টিকর্তায় জয়ী হয়ে এগিয়ে যেতে চায়।

সর্বশেষ গত ১৮/০৩/২৪ইং তারিখ আমার স্ত্রী আমাকে নিয়ে যায় এনজিওগ্রাম পরীক্ষা করানোর জন্য। আমি বলি আমার সম্পূর্ণ সুস্থ্যতায়ও তুমি নিয়ে যাচ্ছ শুধু তুমি ও ঐ ডাক্তার আপার সম্মানার্থে যাচ্ছি। যাওয়ার পর নতুন এক অভিজ্ঞতা হলো ওখানোর প্রসিডিউরগুলো দেখে; মনে হলো সবেমাত্র জন্মগ্রহণ করেছি। তারপর পরীক্ষা হলো এবং নি:শব্দে কষ্ট সহ্য করে বাধাঅবস্থায় শুয়ে সবই পরখ করলাম। কিন্তু আমাকে কোন চিন্তা বা অসুস্থ্যতা গ্রাস করেনি বরং সুস্থ্যসবলতা এমনকি টগবগে তরুনের তারুন্যে উদ্ধীপ্ত করে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর আমার স্ত্রী ওটিতে আমার সামনে হাজির এবং তার মলিন চেহারা ও উষ্ঠাধর শুকানো দেখে আমি প্রশ্ন করি তোমার কি হয়েছে? সে বলতে পারেনি কিছু কারন তার গলা শুকানো; আবারো জোর গলায় জিঙ্গাসা করি কি হয়েছে; তখন সে বলে স্মীতস্বরে তোমার ডান এবং বাম পাশের মূল রগে (ভ্যাসেল) ৯৫% এবং ৮৫% ব্লক ধরা পড়েছে। আমি বললাম এই কথা; চিন্তা কিসের আমি ভাল ছিলাম এবং আছি ও থাকব নিশ্চিত; এখন তুমি কি করতে চাও বা ডাক্তার সাহেবরা কি করতে চাই তাই করো আমার সমস্যা নেই। আমি শতভাগ সৃষ্টিকর্তার উপর বিশ্বাস করি এবং জন্ম ও মৃত্যু তাঁর হাতে। কেউ এক সেকেন্ড বাড়াতে বা কমাতে পারবে না এমনকি কেউ আমাকে কষ্টও দিতে পারবে না। তোমার চিকিৎসা করালেও ভাল থাকবো না করালেও আগেরই মত ভাল থাকব এই নিশ্চয়তা আমার ক্ষেত্রে শতভাগ। তখন আমার স্ত্রী সেই সাহসি সিদ্ধান্ত নিয়ে আমাকে দুটি রিং পড়িয়ে নিয়ে আসে; কারণ আমরা শুন্য হাতেই হাসপাতালে প্রবেশ করি আর সঙ্গে নিয়ে যাই আল্লাহর ভালবাসা ও রহমত। আল্লাহর রহমাত আমাদেরকে সেই শুন্য হাতেই পূর্বের ন্যায় বাসায় নিয়ে আসে। তবে সেই ক্ষেত্রে ডাক্তারদ্বয় রিং পড়ানো এবং সিসিইউ ও পোষ্ট কেড এই তিন জায়গায় আল্লাহর আশির্বাদ দেখতে পান। আমাকে রোগী মনে হয়নি এবং অসুস্থ্যও মনে হয়নি। বরং একজন্য সুস্থ্য মানুষের স্বরূপ দেখতে পেয়েছে। আমাকে আল্লাহর উপর বিশ্বাসী এবং নির্ভরশীল জীবনের ফল উপভোগকারী হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। পাশের রোগীরা আমার অভিজ্ঞতা এবং আল্লাহর ইচ্ছা এবং অভিপ্রায় বোঝার সুযোগ পেয়েছে। আমার স্বস্ফুর্ত শিশুসুলভতা এবং পুর্ব সুস্ততা ও পরবর্তী সুস্থ্যতা নিয়ে সকলেই বলেন এটা আল্লাহরই দান।

উপযুক্ত সময়ে উপযুক্ত ফল ভোগ করতে আল্লাহ আমাদের সকলকেই সহায়তা করেন এবং করবেন। তাই স্বস্তীকে খুজে পেতে দুনিয়াবীতে নয় বরং আখেরী পুজিতে মনযোগী হউন। সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে যোগসূত্র স্থাপন করুন এবং সৃষ্টিকর্তার দেখানো পথে মনে-প্রাণে অগ্রসর হউন। তাহলে শতভাগ স্বস্তী ভোগ করে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়ে সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে বসবাস করতে শুরু করুন। স্থায়ী ঠিকানা আমাদের পৃথিবীতে নয় বরং মৃত্যুর পরের জীবনে যাকে বলে থাকি আখেরী জীবন বা সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে বসবাস (এককথায় বেহেস্ত বা জান্নাত)।

Leave a Reply

Your email address will not be published.