সময়ের স্রোতে ভাসছি আমরা

সময়ের স্রোতে ভাসতে ভাসতে আমরা এখন ভুলে গেছি আমাদের অতীত এবং মূল্যাবোধ ও সীকড়। নতুনত্বকে আঁকড়ে ধরে জীবনকে গড্ডালিকা প্রবাহে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছি নতুন এক অজানা গন্তব্যে। তবে সময়ের সঙ্গে পাল্লাদিয়ে এগিয়ে যাওয়া নতুন সংস্কৃতি থমকে দাঁড়াতেও  বেশী সময় লাগবে না। কারণ সবকিছুই সৃষ্টির কল্যাণে। কল্যাণের তরেও অনেক কিছুই অকল্যাণের হয়ে জীবনের বারোটা বাজাচ্ছে। তাই সময় এবং স্রোত এই দুটোকেই প্রয়োজনের অতিরিক্ত ব্যবহার না করা বুদ্ধিমানের কাজ। কিন্তু আমরা শুধু অতিরিক্তই নয় বরং মাত্রাতিরিক্তকে পার করে এখন অতিমাত্রাতিরিক্তের অতিক্রান্তের পথে। তাই এই পথ সামলানোর জন্য এখনই পদক্ষেপ নেয়া জরুরী। তবে এতে প্রয়োজন ঐক্যবদ্ধতা এবং একাগ্রতা ও সার্বজনীন কল্যাণের অগ্রযাত্রার চর্চা।

পৃথিবীর কোন কিছুই আর স্থায়ী এবং কল্যাণকামী নয়। কোনকিছুই মানুষের সামগ্রীক প্রয়োজনে নয়। কোন কিছুই মানুষের স্থায়ী সমস্যা সমাধানের পাথেয় নয়। কারণ মানুষ মরণশীল। জন্মিলে মরিতে হইবে এটা শতভাগ নিশ্চিত ও প্রমানিত। একজন মানুষের জীবনের শতভাগ স্বার্থকতা হলো মৃত্যুর মাধ্যমে অর্জন করা চীরস্থায়ী জীবনে পদার্পন। তাই অবাধ্যতার শাস্তিস্বরূপ বিতারিত হয়ে পৃথিবীতে স্বল্পকালীন জীবনে কোনকিছুই চিরস্থায়ীভাবে কাজে লাগে না বরং সবই ক্ষতির কারণে পরিণত হয়। কারণ আমরা এখন প্রয়োজনের অরিতক্ত গ্রহণের যুগে বসবাস করে যাচ্ছি। তারপরও যারা প্রয়োজনটাকে গুরুত্ব দিয়ে প্রয়োজনাতিরিক্ত গ্রহন থেকে বিরত থেকে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে তারাই যেন নিশ্চিত ও মুক্ত এবং চিরস্থায়ী জীবনের অস্বাধন পৃথিবী থেকে শুরু করে যাচ্ছে। আমরা এখন আমাদের চিন্তা ও কর্মসম্পাদন করা অংশের দিকে ফিরে তাকালেই ভালভাবে বুঝতে পারি যে, সম্পাদনকৃত অংশটুকু দ্বারা সৃষ্টির কতটুকু কল্যাণ সাধিত হয়েছে এবং অদূর ভবিষ্যতে কতটুকু হবে। তবে তা নিতান্তই কম এবং শুন্যের কৌটায় বললেও ভুল বলা হবে না। তাই আসুন সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছা ও অভিপ্রায়ে গুরুত্ব দিয়ে ঈমান ও বিশ্বাসের সহিত অংগ্রসর হই।

আগেকার মানুষগুলো সব সময়ই কৃতকর্মের দ্বারা আখেরী জীবন বা সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টি অর্জন করতে চাইতো আর সেই কারণেই সৃষ্টিকর্তার বিরাগভাজন হতো এবং সৃষ্টিকর্তা সেই কারণেই মানুষকে তাঁর ঈমান ও বিশ্বাসের মাধ্যমে জীবন অতিবাহিত করার আহবান জানিয়েছেন। সময়ের পরিক্রমায় আমাদের প্রয়োজন সময়ের স্রোতে গ্যা ভাসিয়ে না দিয়ে বরং স্রোতের বিপরীতে গিয়ে নিজেকে যাচাই করে সৃষ্টিকর্তার উপর ঈমান ও বিশ্বাস নিয়ে অগ্রসর হওয়াই জরুরী। পৃথিবীর নিয়ম-নীতি এবং মানুষের সৃষ্টি গ্রন্থাবলীতে উল্লেখিত জীবন বিধান এমনকি মানব রচিত মূল্যবোধগুলো এখন আর কাজে আসছে না বরং এইসকলই মানুষের জীবনে নাভিশ্বাস তুলে তুলকালাম কান্ড বাজিয়ে যাচ্ছে। বাজার ব্যবস্থা, নির্বাচন ব্যবস্থা, রাষ্ট্র পরিচালন ব্যবস্থা, অফিস পরিচালন ব্যবস্থাসহ যাবতীয় কর্মকান্ডে যেন এক অশনি সংকেত বেজে যাচেছ। তাই সময় থাকতে মনা হুশিয়ার। নিজেকে রক্ষায় সবসময় ইয়ানাফছি ইয়ানাফছি উচ্ছারণ ও কৃতকর্মে প্রয়োগ করুন।

ধর্মীয়ভাবে রোযা সকল ধর্মেই স্বীকৃতি পেয়েছে কিন্তু রোযার আসল মাহাত্ব দিন দিন বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে এবং মানুষ তাঁর নিজ প্রতিমূর্তীতে একেকজন একেক সৃষ্টিকর্তায় পরিণত হচ্ছে। নিজের প্রয়োজনে রোযা আজ সমাজে ভাসমান থাকছে। সৃষ্টিকর্তার জন্য এই রোযা এখন আর কাজ করছে না। রোযার যেসকল নিয়মাবলী এবং রোজদারদের যে সকল আচরণ বিদ্যমান তা যেন রোযাকে হালকা করে পৃথিবী থেকে রোযার তাৎপর্যেও বিদায় বাণি বাজাচ্ছে। আসুন আমরা সৃষ্টিকর্তার সেই সৃষ্টিপূর্ব পরিকল্পনায় ফিরে যায় এবং হারানো সকল মূল্যবোধকে জাগ্রত করি এমনকি চর্চায় আনয়ন করি। ধর্মের বিশ্বাসের সঙ্গে কর্মের সম্মিলন ঘটাই। বিশ্বাস ও ঈমানকে কার্যে পরিণত করি। সময়ের এই স্রোত থেকে নিজেদেরকে বের করে নিয়ে আসি এবং সৃষ্টির কল্যাণে নিবেদিত প্রাণ হয়ে জীবনাচরণ পরিচালনা করি।

Leave a Reply

Your email address will not be published.