উপজেলা নির্বাচনে দলীয় মন্ত্রী-এমপি’র আত্মীয়দের নিয়ে আওয়ামীলীগের অবস্থান ?

প্রশান্তি ডেক্স ॥ চার ধাপের আসন্ন উপজেলা নির্বাচন থেকে দলীয় মন্ত্রী-এমপি’র আত্মীয়দের ‘সরে দাঁড়ানোর নির্দেশনা’ এবং ‘অমান্য করলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছিল আওয়ামী লীগ। কিন্তু তা উপেক্ষা করে ভোটে থাকছেন এমন অনেক ‘আত্মীয় প্রার্থী’। এ নিয়ে তৃণমূলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হলেও আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি বলে জানা গেছে। সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরামের এই সভার পর ‘ঘর সামলাতে’ এই ইস্যুতে আওয়ামী লীগ ‘ইউটার্ন’ নিচ্ছে কিনা, সেই প্রশ্ন উঠেছে খোদ দলের ভেতরেই।

গত মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) রাতে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক হয়। মে-জুনে শুরু হতে যাওয়া উপজেলা নির্বাচন সামনে রেখে এ বৈঠকে দলীয় মন্ত্রী-এমপি’র আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশনার বাস্তবায়ন এবং তা অমান্য করলে সাংগঠনিক কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, এসব বিষয়ে আলোচনা এবং কঠোর সিদ্ধান্ত আসবে বলে ধারণা করছিলেন অনেকেই।

তবে দলীয় সূত্র বলছে, উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বৈঠকে কোনও আলোচনার সুযোগই দেননি আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। বৈঠকটি সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে শুরু হয়ে শেষ হয় রাত সোয়া ১০টায়। এতে দলের সাংগঠনিক অবস্থা, দেশের বিদ্যমান রাজনীতি নিয়ে আলোচনা হয় এবং প্রয়োজনীয় নানা দিক-নির্দেশনা দেন তিনি। এছাড়া দলের গোল্ডেন জুবলি পালন, ১৭ মে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস, শোকের মাস আগস্টব্যাপী কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হয় বৈঠকে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, বৈঠকের শুরু থেকে আমি ছিলাম না। আমি থাকা অবস্থায় উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপির আত্মীয়দের প্রার্থিতা নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি। সাংগঠনিক নানা বিষয়ে এবং বিভিন্ন দিবসকেন্দ্রিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকদের নিয়ে অনানুষ্ঠানিক এক বৈঠক করেন সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এতে দফতর সম্পাদক ও উপদফতর সম্পাদকরাও উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে ওবায়দুল কাদের সাংগঠনিক সম্পাদক ও দফতর সম্পাদকদের নির্দেশ দেন, উপজেলা নির্বাচনে যে-সব মন্ত্রী-সংসদ সদস্যের আত্মীয়রা প্রার্থী হয়েছেন তাদের তালিকা করতে হবে। ওইসব মন্ত্রী ও এমপিদের দলীয় প্রধানের নির্দেশনা জানিয়ে চিঠি দেওয়া এবং তাদের সঙ্গে কথা বলার জন্যও সাংগঠনিক সম্পাদকদের নির্দেশনা দেন তিনি।

সেই অনুযায়ী আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বারবার সতর্ক করার পর মন্ত্রী-এমপিদের নির্দেশনা সংবলিত চিঠি পাঠানো হয় দফতর থেকে, সঙ্গে বিভাগভিত্তিক দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকরাও তালিকা করে ফোন করে কথা বলেন।

তবে গত মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভা শেষে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানান, দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে উপজেলা নির্বাচনে যে-সব এমপি-মন্ত্রীর স্বজন প্রার্থী হয়েছেন তাদের বিষয়ে আওয়ামী লীগ সময়মতো ব্যবস্থা নেবে।

বৈঠকে উপজেলা নিয়ে কোনও আলোচনা হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘না, হয়নি।’ নির্দেশ অমান্যকারীদের কোনও শাস্তি হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। আমি আপনাদের বরাবর একই কথা বলেছি যে, সময়মতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ৩০ তারিখে কোনও সিদ্ধান্ত আসবে এ বিষয়ে কিন্তু আমি কিছু বলিনি। এখনও একই কথা বলবো, সময়মতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বৈঠকে অংশ নেওয়া আওয়ামী লীগের অর্ধ ডজন নেতা আমাদের প্রতিনিধিকে বলেন, সভায় শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ ও সরকারের বিরুদ্ধে এখনও ষড়যন্ত্র চলছে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এসব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে এগিয়ে যেতে হবে। সেজন্য সংগঠনকে আরও শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। দলের ভেতরে ক্ষুদ্র স্বার্থে প্রাধান্য দেওয়া, দলাদলি, অনৈক্য থাকলে জনগণ পাশে থাকবে না। তখনই দুঃসময় নেমে আসে। তাই জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ করতে হবে।

সূত্রমতে, ১৯৮১ সালে দেশে ফেরা এবং দলকে সংগঠিত করার স্মৃতিচারণ করেন শেখ হাসিনা বৈঠকে আরও বলেন, তখন কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় হাতাহাতি হওয়ার উপক্রমও দেখেছি। সভায় অমুকের গ্রুপ তমুকের গ্রুপ দেখেছি। আমি কোনও গ্রুপকে সমর্থন বা বিরোধিতা করিনি।

এ সময় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নেতাদের প্রার্থিতা উন্মুক্ত করে দেওয়ায় দলের ভেররে সৃষ্ট দলাদলি বা গ্রুপিং যেকোনও মূল্যে দূর করার নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা। এছাড়া তৃণমূল পর্যায়ে দলের সম্মেলনের দুই দিন আগে যেতে, সম্মেলন করে কমিটি ঘোষণা করার পর আরও দুই দিন থাকতে এবং এলাকায় গিয়ে দ্বন্ধ-কোন্দল মিটিয়ে আসতে কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।

বৈঠক শেষে ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, ১৭ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের কর্মসূচি, ১৫ আগস্ট, ২১ আগস্টের কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। মূল আলোচনা হয়েছে দলের হীরক জয়ন্তী, ৭৫ বছরের কর্মসূচি নিয়ে। এ বছর আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর হীরক জয়ন্তী জাঁকজমকভাবে আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ নিয়ে আমরা সম্পাদকমন্ডলীর বৈঠক করবো।

এদিকে, গত মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) কুমিল্লা জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে উপজেলা পরিষদ সাধারণ নির্বাচন-২০২৪ উপলক্ষ্যে কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন নির্বাচন কমিশনার (ইসি) আনিছুর রহমান।

পরে এমপি-মন্ত্রীদের আত্মীয়স্বজনদের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য কারও আত্মীয়-স্বজনের বিষয়ে আইনে বলা নেই। আইনে বলা আছে, যিনি প্রাপ্তবয়স্ক এবং যিনি ভোটে অংশগ্রহণের যোগ্যতা সম্পন্ন সে অংশগ্রহণ করতে পারবে। আমরা জেনেছি, অনেকের আত্মীয়-স্বজন নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। আমরা গোয়েন্দা মাধ্যমে যে তথ্য পাই তাতে তেমন সমস্যা দেখি না। দুয়েকটি জায়গায় বিচ্ছিন্ন সমস্যা রয়েছে তা আমরা কঠোর নজরদারিতে রেখেছি। যদি বড় ধরনের সমস্যার সৃষ্টি করে আমরা তা মেনে নেবো না। নির্বাচন স্থগিত করা, প্রার্থিতা বাতিল করার ব্যবস্থাও নিতে পারি।

Leave a Reply

Your email address will not be published.