মে দিবস (শ্রম দিবস) ’২৪

মহান মে দিবস একটি পুরোনো ঐতিহ্যবাহী যন্ত্রনাকতরতা থেকে মুক্ত থাকার দিন বা অধিকার আদায়ের দিন। এই দিবসটির জন্য বিলিয়ে দিতে হয়েছিল তাজা প্রাণ। এই দিবসটি আসলে ঐসকল শ্রমিকদের স্মরণে এবং আগামীর শ্রমিক কল্যাণে করণীয় ঠিক করার দিন।

এই দিনটি বছরে একবার আসে আর এই একবারই আনুষ্ঠানিকতায় উদযাপিত হয়। কিন্তু কাজের কাজ বা করণীয় ঠিক করা হয়নি এমনকি বুকের তাজা রক্ত ঝড়িয়ে প্রাণ উৎসর্গকারীদেরও ঠিকভাবে স্মরণ করা হয়নি। ৮ কর্মঘন্টা নির্ধারিত হওয়ার দিন এই দিবসটি। বিভিন্ন প্রতিপাদ্য দ্বারা ভুপাতিত এই দিনটি। তবে আমার মতে এই দিনটি হওয়া উচিত কাজমুখর। কারন কাজে কোন তফাৎ নেই বা পার্থক্য নেই। কাজ কাজই। কাজে ছোট বড় ভেদাভেদও নেই। যার যার যোগ্যতানুযায়ী সেই সেই কাজ করবে এটাই প্রকৃতির এবং সৃষ্টিকর্তার বিধান। সৃষ্টিকর্তা তার সৃষ্টিকে সাজিয়েছেন একে অন্যের পরিপূরক হিসেবে; তাই যে যেই কাজই করুকনা কেন সে আরেকজনের মুখাপেক্ষী।

কোন কাজ নিয়েই গর্ব করার সুযোগ নেই। কারণ প্রত্যেকটি কাজই পরিপূর্ণতা বা সভ্যতার এমনকি মূল্যবোধের বহি:প্রকাশ বা দৃশ্যমানতা। স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা নিজেই কাজ করেন এবং অনবরত করে যাচ্ছেন। তিনি কাজপ্রীয় এবং তাঁর সৃষ্টিকে তাঁর কাজে সহযোগীতা করার জন্যই নিয়োজিত রেখেছেন। যারা কাজ করেনা তাদের তিনি পছন্দ করেন না। আর এই সম্পর্কে পাক কিতাবে লিখেছেন – যারা কাজ করেনা তারা না খেয়ে থাকুক। এবং যারা কাজ করে তাদের গায়ের ঘাম শুকানোর আগেই যেন পারিশ্রমিক পরিশোধ করা হয়।

এইদিনটিকে আমি কাজে মনোযোগী হওয়ার দিন হিসেবে আখ্যায়িত করতে চাই। কারণ কাজবিহীন জীবন মৃত এবং না খেয়ে থাকার। আজকের দিনটি আনুষ্ঠানিকতায় কাজবিহীন না রেখে বরং কাজের মধ্যে নানান সৃজনশীল কর্মচাঞ্চল্যতা দিয়ে মুখরিত রাখাই মোক্ষম বিষয়। কারণ শ্রমিক তার কাজ না করলে পেটে ভাত জোটবে না, চিকিৎসা হবে না, ছেলেমেয়ের স্কুল সচল থাকবে না, বাসস্থানে বসবাসের নিশ্চয়তা থাকবে না। যাতায়তের যোগান সচল থাকবে না। মোট কথা মৌলিক চাহিদায় ঘাটতি দৃশ্যমান হবে। তাই শ্রমিককে কাজ করতেই হবে। প্রতিদিন, প্রতি সপ্তাহে, প্রতি মাসে এমনকি বছরের পুরোটা সময়। আর এই কাজের জন্যই পৃথিবী টিকে রয়েছে। তবে এই বিষয়ে সৃষ্টিকর্তার একটি শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ যে, সৃষ্টিকর্তা ৬দিনে তাঁর সমস্ত সৃষ্টি সম্পন্ন করেছেন এবং ৭ম দিনে তিনি কোন কাজ করেননি বরং ঐ দিনটিকে আশির্বাদ করেছেন এবং সৃষ্টিকে দেখে অতি উত্তম ও চমৎকার বলে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।

সেই অতি উত্তম ও চমৎকারিত্ব খুঁজে ফেরাই এখন আমাদের প্রাত্যহিক ও দৈনন্দিক কাজ। আরো একটি বিষয় শিক্ষণিয় যে, সৃষ্টিকর্তা তাঁর সিফতে সৃষ্টি আশরাফুল মাখলুকাতকে বলেছেন যেন সপ্তাহে একটি দিন কাজ না করে অবসরে থাকেন। এই কাজহীন দিনটিতে যেন সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে একাগ্রে থাকেন এবং তাঁর গুনগান প্রকাশ করেন এমনকি শুকরিয়া আদায় করেন। শরীর নামক যন্ত্রটাকে বিরতিতে রেখে পরের সপ্তাহের জন্য প্রস্তুত করেন।

তাই বিশেষ দিন এবং বিশেষ মুহুত্ব পালনে একটি কাজের দিন যেন নষ্ট না হয় সেইদিকে লক্ষ্য রাখা জরুরী। কারণ এইদিনের কাজের দ্বারা পৃথিবীর সকল সৃষ্টির কল্যাণে সৃষ্টিকর্তার বিশালত্ব এমনকি মহিমা প্রকাশিত হয়। তাই কাজহীন থেকে সৃষ্টিকর্তার বিশালত্বে যেন আমরা কুঠারাঘাত না করি। আর সৃষ্টিকর্তার দেয়া বিধানাবলীর আলোকে আমাদের জীবনের সকল কিছুকে সন্নিবেশীত করি।

আসছে বছরও এই দিনটি আসবে তাই আমরা নতুন করে আগামীর করণীয়তে নতুন কিছু যুক্ত করি। আর প্রতিপাদ্য পরিবর্তনে কাজ করি। আগামীতে যেন যা করা হয়নি বা করতে পারিনি সেইদিকে মনযোগ দিয়ে নতুন কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করি। মে দিবসে সকলের কল্যাণ সাধিত হউক। কাজের মধ্যদিয়েই জীবনের সার্থকতা খুজে পাওয়া যাক এবং কাজ ও ঈমান একসঙ্গে প্রকাশিত হউক।

যারা জীবন আত্মহুতি দিয়েছিলেন তাদের সেই আত্মহুতির মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখতে সচেষ্ট থাকি এবং তাদের রেখে যাওয়া আদর্শকে ধারণ ও লালন করি। তাদের রেখে যাওয়া প্রজন্মকে সাধুবাদ জানাই এবং প্রয়োজনে পাশে থাকার অঙ্গিকার করি। কাজ ও সময়কে পরিপূর্ণরূপে সাজিয়ে তুলি যথাক্রমে- কাজ + আনন্দ + বিশ্রাম এই তিনেই ঘরে উঠুক আগামির নতুন সমাজ ব্যবস্থা। কোনটাকে বাদ দিয়ে কোনটা নয় বরং প্রত্যেকটাই একে অন্যের সঙ্গে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। তাই মহান মে দিবসে আমি কাজে মনযোগী হওয়ার আহবান জানাই। কাজতো কাজই এবং আনন্দ বা বিনোদন উপভোগও একটি কাজ আর রইল বিশ্রাম বা ঘুম; এটিও একটি কাজ। তাই যে কাজই করিনা কেন প্রত্যেকটি কাজেই যেন মনযোগী হই। এই আহবানের মাধ্যমেই আগামীর মে দিবসের তাৎপর্যকে সাধুবাদ জানাই।

Leave a Reply

Your email address will not be published.