কবে ফিরবে শ্রমিকের ভাগ্য…

প্রশান্তি ডেক্স শ্রমিকদের অধিকারের প্রস্তাব শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে প্রতীয়মান হলেও অধিকার বাস্তবায়ন এখনই সম্ভব হচ্ছে না। বাস্তবায়নের জন্য শ্রম কমিশনের আলাদা সুপারিশের ওপর নির্ভর করতে হবে আরও বেশ কিছু সময়। অন্যদিকে, শ্রমিক সংগঠনগুলো বলছে, সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করছে শ্রমিকের ভাগ্য। মজুরির দাবিতে পুলিশের গুলিতে মারা যাওয়া শ্রমিকের বকেয়া আদায়ের দাবিতে করা আন্দোলনে বর্তমান সরকারের সময় যৌথবাহিনীর গুলিতে শ্রমিক মারা গেছে। ফলে অধিকারের প্রস্তাব শুধু কাগজে-কলমে থাকলেই হবে না, তার প্রয়োগ হতে হবে।

শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন বলেন, ‘সকল শ্রমিকের আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করাই আমাদের মূল সুপারিশ। ন্যূনতম মজুরি ঠিক করা, শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষার মধ্যে নিয়ে আসা।’

শ্রমিকের মৌলিক প্রাপ্য আইন দ্বারা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে— এটিই আমাদের এক নম্বর সুপারিশ। এগুলো বাস্তবায়নের জন্য যেগুলো সংশোধনের দরকার হবে, আনুষঙ্গিক বিষয়গুলোতে নজর দিতে হবে।

ন্যূনতম মজুরির পরিমাণ নির্ধারণ প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছি, আইএলও’র যে মানদন্ড আছে, সেটাকে বিবেচনায় রেখে মানদন্ড ঠিক করা এবং প্রতিবছর আপডেট করা আর তিন বছর পর পর মজুরি পুননির্ধারণ করা।

সর্বজনীন সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়ে সৈয়দ সুলতান উদ্দিন বলেন, ‘সর্বজনীন সামাজিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আমরা বলেছি, নিরাপত্তা থাকতে হবে। শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়লে শ্রমিক যেন সহযোগিতা পায়।

এই সংস্কার সুপারিশে দ্রুত শ্রমিকের ভাগ্য ফিরবে কিনা জানতে চাইলে সৈয়দ সুলতান উদ্দিন বলেন, ‘সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নে আরেকটি রূপরেখা প্রণয়ন করে দেবো। সরকার এই মুহূর্তে যেগুলো বাস্তবায়ন করতে পারবে, সেগুলোর একটি তালিকা করে কীভাবে বাস্তবায়ন করবে সেটা করে দেবো।’

শ্রম বিষয়ক সংস্কার কমিশনের জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ঘোষণার সুপারিশে শ্রমিকের ভাগ্য কতটা ফিরবে তা জানতে চাইলে গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার বলেন, ‘সুপারিশ বাস্তবায়নের বিষয়ে বড় বড় আন্দোলনের পর বাস্তবায়ন হয়নি। সুপারিশ বাস্তবায়ন কঠিন ব্যাপার। গণঅভ্যুত্থানের এই অন্তবর্তী সরকারে শ্রমিকদের বড় একটি ভূমিকা রয়েছে। আমরা ভেবেছিলাম গুরুত্বের সঙ্গে শ্রমিকদের বিষয়টি বিবেচনা করবে, তারা বলেছিলেন, মজুরি পুননির্ধারণটা বিবেচনা করবেন, সেটা বলা পর্যন্তই আছে। এ বিষয়গুলো যদি শুধু লিখিত আকারেই থাকে, বাস্তবায়ন যদি না হয়, সেটা তো র‍্যাপিডলি হবে। তারপরও সুপারিশে আসছে, এটি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে। লড়াইয়ের সময় বলতে পারবো এই দাবিগুলো আমাদের ছিল শ্রম সংস্কার কমিশনের সুপারিশেও আছে এভাবে বিষয়টি সামনে আনতে পারবো।

শ্রম সংস্কার কমিশন এই সরকারের গঠন করা, তাই সুপারিশগুলো তো দ্রুত বাস্তবায়ন শুরু করছে কিনা জানতে চাইলে জলি তালুকদার বলেন, ‘আমি মনে করি সরকার আন্তরিক হলে এই সুপারিশ আসার আগেই এগুলো বাস্তবায়ন করতে পারতো। এই সরকারও তো লড়াই করে সরকার গঠন করেছে। যেসব আইন দ্বারা শ্রমিকরা বার বার হেনস্থার শিকার হয়েছে সেগুলো তো বাদ দিয়ে দিতে পারতো। শ্রমিকের মজুরি পুননির্ধারণ তো সুপারিশের আগেই বাস্তবায়ন করতে পারতো। এসব বাস্তবায়ন করলে শ্রমিকরা বলতে পারতো-আগের সরকারের চেয়ে এই সরকার ভালো। আগে শ্রমিকদের মজুরির দাবিতে পুলিশের গুলিতে যে শ্রমিক মারা গেছে, আন্দোলনের পর তার বকেয়া আদায়ের দাবিতে করা আন্দোলনে যৌথবাহিনীর গুলিতে শ্রমিক মারা গেছে। শ্রমিকদের বিষয়ে সব সরকারের একই ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি। এটি পরিবর্তনের লড়াই আমরা সব সময় করছি, এখনও লড়াই করতে হচ্ছে।

বিদ্যমান আইন ও বিধিমালার বাইরে ব্যতিক্রম কী জুটবে শ্রমিকদের- জানতে চাইলে জলি তালুকদার বলেন, ‘শ্রম সংস্কার কমিশন যে প্রতিবেদন দিয়েছে তার অনেকগুলোই তো আমাদের প্রস্তাবে ছিল। যে জন্য আমরা লড়াই করেছি। এই দাবিগুলো আমরা অনেক আগে থেকেই করছি। ’৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের পর যারা ক্ষমতায় আসছিল তারাই তা বাস্তবায়ন করবে ভেবেছিলাম কিন্তু আমরা প্রতিবারই দেখছি সেগুলো বাস্তবায়ন করা হয় না। দাবি যা আদায় হয় লড়াইয়ের মাধ্যমে।

শ্রমিকদের সন্তানদের শিক্ষার বিষয়টি প্রতিবেদনে আরও সুস্পষ্টভাবে আসা উচিত ছিল বলে মনে করেন জলি তালুকদার। তিনি বলেন, পাটকল শ্রমিকদের জন্য যেমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে সেরকম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান লাগবে।

সংস্কার কমিশনে শ্রমিকদের তথ্য ভান্ডারের কথা বলা হয়েছে, কিন্তু এটাও বলতে হবে যে শ্রমিকের তথ্য মালিকপক্ষ নিয়ে যেন ব্ল্যাকলিস্ট না করে ফেলে। শ্রমিকদের নিরাপদ রাখতে হবে। এছাড়াও অনেকগুলো জায়গা আছে। শ্রম সংস্কার কমিশন যে সুপারিশ দিয়েছে সেগুলো যদি প্রস্তাবনা আকারেই থাকে তাতে শ্রমিকের কোনও লাভ হবে না।

জুলাই আন্দোলনে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তবর্তী সরকার গঠন হয় ৮ আগস্ট। শ্রমিক সংগঠনগুলোর দাবি আন্দোলনে শ্রমিকদের ব্যাপক ভূমিকা ছিল। সে কারণে শ্রমিকদের প্রত্যাশা রয়েছে এই সরকারের কাছে।

অন্তবর্তী সরকার ক্ষমতায় এসে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের কাজ শুরু করে। তারই অংশ হিসেবে শ্রম বিষয়ক সংস্কার কমিশন গঠন করে অন্তবর্তী সরকার। শ্রমিক অধিকার, সুসমন্বিত শিল্প-সম্পর্ক ও অন্তর্ভূক্তিমূলক উন্নয়নের লক্ষ্যে শ্রম জগতের রূপান্তর-রূপরেখা প্রণয়ন করেছে শ্রম সংস্কার কমিশন। কমিশনের প্রতিবেদন গত ২১ এপ্রিল প্রধান উপদেষ্টার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।

তবে কমিশন বলছে, এই সরকারের পক্ষে যেগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব সেগুলো সুনির্দিষ্ট করে আরেকটি রূপরেখা প্রণয়ন করতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.